‘ব্র্যাডম্যানের পর অস্ট্রেলিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হবে কামিন্স’
ওয়ানডে কিংবা টেস্ট; সব সংস্করণেই সাফল্যের জোয়ারে ভাসছেন প্যাট কামিন্স। শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, অধিনায়ক হিসেবেও স্বপ্নের মতো সময় পার করছেন এই পেসার। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভন তো বলেই দিলেন, অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটার স্যার ডন ব্রাডম্যানের পর প্যাট কামিন্সই হবেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার।
সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে চলছে অস্ট্রেলিয়ার ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ টেস্ট। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে টেস্টের টানা ৩ ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন অজি অধিনায়ক।
কামিন্সের বর্তমান বয়স ৩০। সেই হিসেবে ভন মনে করেন, আরও পাঁচ থেকে ৭ বছর খেলতে পারবেন কামিন্স। আর কয়েক বছর পর ব্রাডম্যানের পর কামিন্সই অস্ট্রেলিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভনের ভাষ্য, ‘আমি মনে করি না, সে কখনো স্যার ডনকে (ডন ব্র্যাডম্যান) অতিক্রম করতে পারবে। কিন্তু আমার মতে, স্যার ডনের পরে অস্ট্রেলিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হতে যাচ্ছে কামিন্স। আমার আসলেই মনে হয় এটি, সে (কামিন্স) এতটাই ভালো। তার বোলিং, তার অধিনায়কত্ব, তার পরিসংখ্যান। তার আরও পাঁচ থেকে সাত বছর আছে খেলার মতো।’
২০২৩ সাল মূলত কামিন্সেরই বছর। যদিও ব্যক্তিগত কারণে বছরটি খুব একটা সুখের ছিল না অজি অধিনায়কের। এই বছরেরই মার্চে হারিয়েছেন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মাকে। তবে মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেকে শক্ত রেখেছেন তিনি। তার ছাপ দেখা গেছে তার পারফরম্যান্সেই। অধিনায়ক হিসেবে যুক্তরাজ্যে গিয়ে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করে অ্যাশেজ ধরে রেখেছেন কামিন্স। অস্ট্রেয়িাকে ষষ্ঠবারের মতো জিতিয়েছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। আর বছরের একেবারে শেষে বক্সিং ডে টেস্টে নিয়েছেন ১০ উইকেট, দলকে জিতিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও কামিন্সের জয়জয়কার। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলের নিলামে তার দাম ২০ কোটি রুপি ছাড়ায়। যদিও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কেনা তার সাড়ে ২০ কোটি রুপির রেকর্ড দুই ঘণ্টা পরই ভেঙে দেন স্বদেশি মিচেল স্টার্ক। বাঁহাতি এই পেসারকে ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে কেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
২০২৩ সালে ২৪ ম্যাচ খেলে ৫৯ উইকেট নিয়েছেন কামিন্স। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৯১-৬। ৫৯ উইকেটের মধ্যে টেস্টেই কামিন্সের উইকেট ৪২টি। ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১৭ উইকেট।
ব্যাট হাতেও অ্যাশেজ ও বিশ্বকাপে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছেন কামিন্স। গত বছর ২৮ ইনিংসে ৪২২ রান করেছেন কামিন্স, গড় ২১.১০। অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তার অপরাজিত ৪৪ কিংবা বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সেই দুইশ রানের জুটিতে কামিন্সের অপরাজিত ১২ রান মনে রাখতেই হবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
এখনো পর্যন্ত ১৯৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৪.৪৫ গড়ে ৪৫৩ উইকেট নিয়েছেন কামিন্স। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার নবম সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক তিনি। ১০০১ উইকেট নিয়ে অজিদের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক প্রয়াত কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন।
এর মধ্যে ৫৮ টেস্টে ২৫৭ উইকেট নিয়েছেন কামিন্স। এছাড়া ৮৮ ওয়ানডেতে ১৪১ উইকেট ও ৫০ টি-টোয়েন্টিতে ৫৫টি উইকেট আছে তার। সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৬১ ইনিংসে ১ হাজার ৭৪৬ রান এই তারকার। এর মধ্যে দুইটি টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি আছে ৩০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের। এমন পারফরম্যান্সই রায় দেয়, লোয়ার অর্ডার ব্যাটার হিসেবে কতটা দক্ষ কামিন্স।