পোশাকে বাড়লেও সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেই সুখবর

আব্দুল্লাহ কাফি
০৩ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
পোশাকে বাড়লেও সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেই সুখবর

তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বাড়লেও সার্বিক রপ্তানিতে তেমন কোনো সুখবর নেই। মূলত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে রপ্তানি আয় টিকে আছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না বাড়লেও ২০২৪ সাল নিয়ে আশা দেখছেন উদ্যোক্তারা। ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বিশ^বাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া, ক্রয়াদেশ কম হওয়া এবং পণ্যের যৌক্তিক মূল্য না পাওয়ার কারণেই রপ্তানি কম হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণের অন্যতম উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের অক্টোবর, নভেম্বরের পর ডিসেম্বর মাসেও রপ্তানি আয় কমেছে। ফলে ডলার সংকট শিগগির কাটছে না।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক খুব ভালো আয় করতে পারেনি। এই ৬ মাসে দুই হাজার ৩৩৯ কোটি ডলার সমপরিমাণ মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। ৬ মাসে পোশাক রপ্তানির আয়ের লক্ষ্য ছিল দুই হাজার ৫৩৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যে বলা হয়েছে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাস পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল কিন্তু এরপর থেকেই ধারাবাহিক কমছে। গেল অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পরের মাস নভেম্বরে কমেছে ৬ শতাংশ। সর্বশেষ গত মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে এক দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৩০ কোটি ডলারের, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কম।

এর আগে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ৪৫৯ কোটি, আগস্টে ৪৭৮ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে ৪৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।

সব মিলিয়ে গত জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলার। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল তিন হাজার ১১ কোটি ডলার।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাক ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চমড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ডিসেম্বর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্য রপ্তানি সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি পিছিয়ে আছে।

তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানি তালিকার শীর্ষে থাকা পণ্যে রপ্তানি কমেছে গত ছয় মাসে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরে সময়ে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অবশ্য কৃষি পণ্যের রপ্তানি চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে এবং প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চাপে পড়েছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে আমাদের দেশে আগের মতো ক্রয় আদেশ আসেনি। এ ছাড়া পোশাকের মূল্য কম ছিল। সব মিলিয়ে রপ্তানি আয় কমেছে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ২০২৪ সাল একটি পরিবর্তনের বছর হবে। গেল বছরটি বিশ্বব্যাপী এই শিল্পের জন্য একটি দুর্বল বছর ছিল। তবে চলতি বছর পোশাকের দাম বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।