প্রতিশ্রুতি বেড়েছে, কমছে অর্থছাড়

বৈদেশিক ঋণ

আব্দুল্লাহ কাফি
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
প্রতিশ্রুতি বেড়েছে, কমছে অর্থছাড়

বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি বাড়লেও অর্থছাড় কমেছে। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের পরিমাণও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে ৫৮ কোটি ৫৯ লাখ ১৫ হাজার ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এর মধ্যে ঋণ ৫৫ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ডলার এবং অনুদান ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৪ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

এদিকে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ছাড় হয়েছিল ২৪ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ২৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার এবং অনুদান ১ কোটি ৫ লাখ ৫৯ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থছাড় ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার কম হয়েছে।

ইআরডি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচ মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ কোটি ৩২ লাখ ১৮ হাজার ডলার। এর মধ্যে সুদ ৫ কোটি ৬২ লাখ ২৩ হাজার এবং আসল ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ডলার। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।

ইআরডি জানিয়েছে, গত পাঁচ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ২১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ হলো ২০ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার এবং অনুদান ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, এবার প্রস্তুতি ভালো থাকার কারণে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে অনেক প্রকল্পের ঋণচুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে প্রস্তুতির অভাবে শুরুর দিকে অনেক প্রকল্পের ঋণচুক্তি করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিশ্রুতি বেড়েছে এর অর্থ হলো প্রকল্প বেড়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তবে যেসব প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ নেওয়া হচ্ছে সেসব প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারাটা মুখ্য বিষয়।

ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ার কারণ হিসেবে জাহিদ হোসেন বলেন, অনেক মেগা প্রকল্পে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। পাশাপাশি অল্প সময়ের জন্য নেওয়া হয়েছে। যেগুলো পরিশোধের সময় হয়েছে। ফলে ওই সব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে যা আগামীতে আরও বাড়বে।

অর্থছাড় কমার কারণ হিসেবে ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। যা অর্থছাড়ও আটকে যাওয়ার মূল কারণ। বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় বাড়াতে প্রতিবছর বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও এডিবি, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ (এআইআইবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ইআরডি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর ত্রি-পক্ষীয় সভা হচ্ছে। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তার পরও বিভিন্ন অনেক প্রকল্পের অর্থছাড় আটকে আছে কিংবা অর্থছাড়ে গতি নেই।