ডেঙ্গুতে রেকর্ড প্রাণহানির বছর
স্বাস্থ্য খাতে ২০২৩ সালে আলোচনার প্রধান কেন্দ্রে ছিল ডেঙ্গু। এ বছর প্রায় সোয়া তিন লাখ মানুষ ডেঙ্গু হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন; মৃত্যু হয় প্রায় ১৭০০ মানুষের, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিলেও বছরের শুরুর দিকে মশা নির্মূলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের তেমন তৎপরতা ছিল না। ফলে স্যালাইন ও হাসপাতালের আসন সংকটসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি তৈরি হয়। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎনা নেন অনেকে।
সরকারি হিসাব মতে, ২০১৯ সালে প্রথমবার ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী লাখ ছুঁয়েছিল। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৬২ হাজার। চলতি বছর গতকাল সোমবার পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশেই মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং গত বছর ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৬৯৮ জনে ঠেকেছে। এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল গ্রামেও। রাজধানীর চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী শনাক্ত হয় গ্রামে।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর আমাদের সময়কে বলেন, ‘ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি আমরা। এত দিন ঢাকা শহরে থাকলেও এবার ৬৪ জেলায় ছড়িয়েছে। এখনই মশা মারার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী বছরও ভুগতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে অচিরেই দেশে জিকা ও ইয়েলো ফিভারের মতো জটিল মশাবাহিত রোগ জায়গা করে নেবে। ইতোমধ্যে জিকা বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ ডেঙ্গু দিয়ে শহর ও গ্রামে অন্যান্য রোগও ছড়াবে।’
বছরব্যাপী ডেঙ্গু চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় একসময় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভরসার কেন্দ্রে পরিণত হয় রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ঢাকায় ১৩ হাজার ৪৮১ জন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডেঙ্গু রোগীতে যখন হাসপাতালগুলো পূর্ণ, তখন গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে ডাবের দাম। ডেঙ্গু রোগীদের ‘জিম্মি’ বানিয়ে ৮০ টাকার ডাব হয়ে যায় ২৫০ টাকা পর্যন্ত। পরে দাম বেঁধে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এবার মশা নিধন কার্যক্রমে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। মশার লার্ভা ধ্বংসে কীটনাশক কেনা নিয়েও হয় জালিয়াতি। জালিয়াতির ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মশা নিধন কার্যক্রমে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘এবারই প্রথম গ্রামে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পুরো দেশের মানুষ এখন ঝুঁকিতে।’ তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার, নতুন কর্মকৌশলে তা নেই। এ ধরনের ব্যবস্থায় ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই নিশ্চিতভাবে বলাই যায় সামনের দিনগুলোতে বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আমরা বারবার বলে এসেছি, গবেষণা বাড়াতে হবে এবং বছরব্যাপী মশা মারার কার্যক্রম চালাতে হবে।’