পরিস্থিতি বুঝে বন্ধ ট্রেন চালুর চিন্তা
নাশকতার আশঙ্কায় চলাচল সীমিত করা পাঁচ জোড়া ট্রেন ফের চালু করতে বিদ্যমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলে দ্রুত এসব ট্রেন চলাচল শুরু করবে। ট্রেনের যাত্রা সীমিত করায় যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ হলেও কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি ট্রেনের বিকল্প রয়েছে। ফলে ঢালাওভাবে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়ার কথা ঠিক নয়।
রেলপথে কয়েকটি নাশকতার ঘটনার পর সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রুটে ৪ জোড়া ট্রেন বন্ধ করা হয়। এছাড়া একজোড়া ট্রেনের রুট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত রাতের বেলায় চলাচলকারী কয়েকটি ট্রেনের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেলের হিসাবে এক জোড়া ট্রেন হলো গন্তব্য স্থানে যাওয়া ও আসা। অর্থাৎ চার জোড়া ট্রেনের চলাচল স্থগিত মানে আটটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হলো। আর দুটি ট্রেনের যাতায়াত পথ সীমিত করা হয়েছে। বর্তমানে যাত্রীবাহী সাড়ে তিনশর বেশি ট্রেন রয়েছে।
ট্রেন বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট রুটে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। পার্বতীপুর থেকে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য উত্তরাঞ্চলের মানুষ কম ভাড়ার এই ট্রেনের ওপরে বেশি ভরসা করতেন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী আমাদের সময়কে বলেন, নাশকতার কারণে যেসব রুটে কম যাত্রী চলাচল করে সেসব রুটে ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে। রাতের বেলায় ট্রেন চলে এমন ট্রেনগুলোর ব্যপারে এমন সিদ্ধান্ত। ওই সব রুটে বিকল্প ট্রেন আছে। তাই যাত্রীদের দুর্ভোগ হচ্ছে এমনটি ঢালাওভাবে বলা ঠিক হবে না। যেমন-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচলকারী ১৬ জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। রাত নয়টার পর চলাচলকারী এক জোড়া কমিউটার ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সারা দিন যাত্রী হলেও রাতে এই পথে তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে রাতে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
রেল কর্মকর্তারা বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় প্রায় প্রতিটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেনের আগে পর্যবেক্ষণের জন্য ট্রেন (পাইলট) চালানো হচ্ছে। এতে ইঞ্জিনের সংকট তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চলাচল স্থগিত হয়েছে কয়েকটি ট্রেনের। সেগুলো হচ্ছে- পার্বতীপুর-রাজশাহী উত্তরা এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেন। ঈশ্বরদী-রাজশাহী পথে দুটি লোকাল ট্রেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে দুটি কমিউটার ট্রেন। ময়মনসিংহ-জামালপুরের ভুয়াপুরে দুটি লোকাল ট্রেন। আর চলাচল সীমিত হয়েছে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেন ঢাকা-জামালপুর রুটে।
সাধারণ যাত্রীরা জানান, ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে যোগাযোগের সহজ মাধ্যমে ট্রেন। এ রুটের রাতের ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক নিয়মিত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। ঢাকায় ব্যবসা করেন এমন মানুষ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরা ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় আক্ষেপ করেন।
আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর থেকে জামালপুরের তারাকান্দি আর নাসিরাবাদ নামে একটি লোকাল ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পর্যন্ত চলাচল করত। ট্রেন দুটি আর গন্তব্যে যাচ্ছে না। ট্রেন দুটির বর্তমান গন্তব্য কেবল জামালপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন। ফলে এসব ট্রেন ব্যবহারকারীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দিনাজপুরের পার্বতীপুর-রাজশাহী রুটে চলা উত্তরা এক্সপ্রেসের ট্রেন বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন জয়পুরহাট, নাটোরের যাত্রীরাও। বিশেষ করে যারা এই ট্রেনে রাজশাহী-দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলাতে অফিস করতে আসতেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ঢাকা-জামালপুরের তারাকান্দা পর্যন্ত চলাচলকারী আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের পথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এখন ট্রেনটি ঢাকা থেকে জামালপুর এবং জামালপুর থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে। তারাকান্দি পর্যন্ত ট্রেন যাচ্ছে না। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের মধ্যে চলাচল করা লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে রাত্রিকালীন ময়মনসিংহগামী মেইল ট্রেনটিও বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন