ভিন্ন দেশ ভিন্ন আয়োজন
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজিত
হয় বড়দিন উৎসব। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ আছে যারা বড়দিন আয়োজন করে ভিন্নভাবে। সেসব ভিন্ন আয়োজন নিয়ে আমাদের আজকের বহুরৈখিক। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত
জানাচ্ছেন
সুইডেনের ‘গ্যাভল গোট’
বড়দিনের ভিন্নধর্মী আয়োজনের মধ্যে আছে সুইডেনের ‘গ্যাভল গোট’। ১৯৬৬ সাল থেকে সুইডেনের শহর গ্যাভলে বড়দিন উদযাপনে ভিন্নধর্মী এই আয়োজনের প্রচলন শুরু হয়। বড়দিন উদযাপনে এখানে স্থাপন করা হয় একটি ছাগলের বিশালাকৃতির খড়ের মূর্তি। মূর্তিটি মূলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং উত্তর ইউরোপ অঞ্চলের ইউলেটাইড ঋতুর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতীক। ৪২ ফুট উঁচু এবং ৩ দশমিক ৬ টন ওজনের ইউল ছাগলের অবতারটি প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে নানা বাতির আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়। এটি দেখতে সুইডিশরা পরিবার-পরিজন নিয়ে যায় গ্যাভল শহরে। তবে দুঃখের বিষয়, একদল ব্যক্তি মনে করেন এটি তাদের ঐতিহ্য বিকৃতির পরিচায়ক। ফলে সেখানকার মানুষদের বেশিরভাগ সময়ে আতঙ্কে থাকতে হয় দুর্বৃত্তদের আক্রমণের ভয়ে। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ২৯ বার হামলা চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে শতভাগ সফল হওয়া সম্ভব হয়নি।
জাপানের ‘কেনটাকি ফ্রায়েড ক্রিসমাস ডিনার’
আগে জাপানে বড়দিন পালনে তেমন বিশেষ কোনো রীতি ছিল না। সাধারণভাবেই উপহার দেওয়া-নেওয়া, আলোকসজ্জার মাধ্যমে উদযাপিত হতো বড়দিন। কিন্তু সম্প্রতি বড়দিন এলে কেনটাকি ফ্রায়েড ক্রিসমাস ডিনারের আয়োজন করার মাধ্যমে দিনটি উপভোগ করে জাপানের অধিকাংশ পরিবার। এর মাধ্যমে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানোর ফুরসত পায় তারা।
আরও পড়ুন:
জলবায়ু সম্মেলনের আদ্যোপান্ত
স্পেনের টিও দে নাদাল
স্পেনে ক্রিসমাস উদযাপনে ব্যবহৃত হয় কাঠের গুঁড়ি সাজিয়ে। এটা পাওয়া যায় স্পেনের কাতালানিয়া প্রদেশে। এটিকে বলা হয় টিও দে নাদাল। তাতে কাঠির হাত-পা, মুখে একটা হাসি এবং মাথায় একটা লাল টুপি পরানো হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর বাচ্চারা এই ফাঁপা গুঁড়ির ভেতর জল এবং খাবার দেয়। রাতে গরম রাখার জন্য কম্বলে মুড়ে দেওয়া হয় এই কাঠের গুঁড়িগুলোকে।
কানাডার
‘ক্যাভালকেড অব লাইটস’
কানাডার টরোন্টোতে আয়োজিত ক্যাভালকেড অব লাইটসের মাধ্যমে বড়দিন উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক ছুটির আমেজ নিয়ে আসে সকলের কাছে। ক্যাভালকেড মূলত আলোকসজ্জার বিশাল আয়োজন হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্ববাসীর নিকট। এ অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় যখন ১৯৬৭ সালে কানাডার সিটি হল এবং নাথান ফিলিপস স্কয়ারে উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে বড়দিনের আগে থেকে নতুন বর্ষ পর্যন্ত আতশবাজি, আইস স্কেটিংয়ের পাশাপাশি সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টরোন্টোর স্কয়ার এবং ক্রিসমাস ট্রি ৩ লক্ষাধিক এলইডি বাল্ব দিয়ে প্রজ্বলিত থাকে।
অস্ট্রিয়ার ‘ক্র্যাম্পাস’
জন্তুবেশে রাক্ষসকুল ঘুরে বেড়ায়
শহরের অলিগলিতে, ছোট্ট ছোট্ট শিশুকে
ধরে বস্তায় ভরে নিয়ে যায় দূর-দূরান্তে।
শুনে গল্প কিংবা রূপকথা মনে হলেও আসলে
আরও পড়ুন:
এবারের সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়
এটি রূপকথা নয় বা হ্যালুইনের উৎসবও নয়।
এটি হলো অস্ট্রিয়ার বড়দিন উপলক্ষে সেন্ট নিকোলাসের দুষ্ট সাহায্যকারী ক্র্যাম্পাস সেজে বাচ্চাদের ভয় দেখানোর রীতি। প্রতিবছর
অস্ট্রিয়ার যুবকরা শিকল ও ঘণ্টা বাজিয়ে
এ উৎসব পালন করেন।
নরওয়েতে ঝাড়ু
লুকিয়ে রাখা
নরওয়েতে ক্রিসমাস ঐতিহ্য হিসাবে
লোকরা বড়দিনে তাদের বাড়িতে ঝাড়ু
লুকিয়ে রাখে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
চলে আসা এই ঐতিহ্যের বিষয়ে লোকরা
বিশ্বাস করে যে, এই দিনে অশুভ আত্মারা
উড়তে ঝাড়ুর খোঁজ করে। সেজন্য বাড়ির বাইরে ঝাড়ু ঝুলিয়ে রাখা হয় যাতে অশুভ আত্মারা ঝাড়ু চুরি করতে বাড়ির
ভেতরে প্রবেশ না করে।
আরও পড়ুন:
তাপমাত্রা যখন সর্বনিম্ন!
আরও অনেক দেশে বড়দিন আয়োজন
ভেনিজুয়েলায় রোলার স্কেটিং করে ক্রিসমাস ডিনার করতে যাওয়া : ভেনিজুয়েলানরা ক্রিসমাস উদযাপনে আলোক সজ্জা, খাওয়া, গান ও নাচের সঙ্গে অন্য একটি ঐতিহ্য মেনে চলে, তাই ক্রিসমাস ডিনার খেতে তারা রাস্তায় রোলার স্কেটিং করে নির্দিষ্ট স্থানে যায়। এমনকি শিশুরা তাদের পায়ের আঙুলের সঙ্গে রশি বেঁধে জানালা দিয়ে অন্যপ্রান্তে ফেলে রাখে, অন্যরা যখন রোলার স্কেটিং করে খেতে যায় তখন রশিতে টান দেয় যাতে শিশুরা মনে করে তাদেরও খেতে যাওয়ার সময় হয়েছে। এভাবে শিশুসহ সবাই রোলার স্কেটিং করে খেতে যায়। আর এটা এত জনপ্রিয় যে, ভেনিজুয়েলার সরকার রোলার স্কেটিং করার জন্য রাত ৮টার পর নির্দিষ্ট রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
আইসল্যান্ডের ‘দ্য ইউল ল্যাডস’ : আইসল্যান্ডে বড়দিন উপলক্ষে এক বিশেষ রীতির প্রচলন আছে। প্রতিবছর বড়দিনের ১৩ দিন আগে থেকে ১৩ জন ইউল ল্যাড (আইসল্যান্ডিক ভাষায় ‘জোলাসভেইনারনির বা জোলাসভেইনার’) আইসল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে শিশুদের উপহার দেয় এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে খেলা দেখায়। আর ইউল ল্যাড শান্ত ছেলে ও মেয়েশিশুদের উপহার আর দুষ্টুদের জুতোর ভেতর নষ্ট আলু রেখে দেয়। এটি ঘিরে আইসল্যান্ড জুড়ে উৎসবের আমেজ দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাইটিং অব ন্যাশনাল হানুক্কাহ মেনোরাহ’ : ১৯৭৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে ৮ দিনব্যাপী ৯ মিটার আকৃতির হানুক্কাহ মেনোরাহতে আলোকসজ্জা করা হয়। এ ছাড়া নানা বিষয়ে আলোচনা, গান-বাজনা, শিশুদের সাংস্কৃতিক পারফরম্যান্সের আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে বিনামূল্যে টিকিট বিতরণ করা হলেও আগে থেকে আগ্রহীদের সিট বুকিং করে রাখতে হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ইভেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কলোম্বিয়ার ‘লিটল ক্যান্ডেলস ডে’ : ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই বড়দিনের আগমনী বার্তা হিসেবে কলোম্বিয়ায় পালিত হয় লিটল ক্যান্ডেলস ডে বা ডিয়া দে লাস ভেলিটাস। কলোম্বিয়ার অধিবাসীরা মেরি এবং ইম্যাকুলেট কনসেপশনের প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে জানালায়, বারান্দায়, উঠোনে মোমবাতি ও কাগজের তৈরি লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাখে বহু আগে থেকেই।
কানাডার ‘ক্যাভালকেড অব লাইটস’ : কানাডার টরেন্টোতে আয়োজিত ক্যাভালকেড অব লাইটসের মাধ্যমে বড়দিন উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক ছুটির আমেজ নিয়ে আসে সবার কাছে। ক্যাভালকেড মূলত আলোকসজ্জার বিশাল আয়োজন হিসেবে পরিচিত বিশ্ববাসীর কাছে। এ অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় যখন ১৯৬৭ সালে কানাডার সিটি হল এবং নাথান ফিলিপস স্কয়ারে উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে বড়দিনের আগে থেকে নতুন বর্ষ পর্যন্ত আতশবাজি, আইস স্কেটিংয়ের পাশাপাশি সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টরেন্টোর স্কয়ার এবং ক্রিসমাস ট্রি ৩ লক্ষাধিক এলইডি বাল্ব দিয়ে প্রজ্বলিত থাকে।
ওয়েলসে ঘোড়ার খুলি নিয়ে মিছিল
একদল পুরুষ ঘোড়ার খুলি নিয়ে শহরে শহরে ঘুরে বেড়ায়, গান গেয়ে বাড়িতে ঢোকার অনুমতি চায়। ঘোড়ার খুলিটিকে বিভিন্ন রঙের রিবন, গয়না দিয়ে সাজানো হয়। ওপরে কাপড় দিয়ে মোড়ানো হয়। একটি ভুতুড়ে চেহারা দেওয়া হয়। সেই খুলি নিয়ে গান গেয়ে গেয়ে ঘরের সামনে যাওয়া হয়। গানে গানে দুপক্ষ কথা বলে, ঘরে ঢোকার অনুমতি চায়। যদি ঘরে ঢোকার অনুমতি পায় তা হলে তাদের খাবার ও পানি দিয়ে থাকে। এটিকে স্থানীয়ভাবে মেরী লয়েড বলা হয়।