জলবায়ু সম্মেলনের আদ্যোপান্ত

আজহারুল ইসলাম অভি
১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
জলবায়ু সম্মেলনের আদ্যোপান্ত

জলবায়ু পরিবর্তন গোটা পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব যেন দিন দিন বাড়ছেই। বিশেষ করে অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো এর খেসারত দিচ্ছে চরমভাবে। অথচ জলবায়ু প্রভাবের জন্য দায়ী বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো। জলবায়ু পরিবিবর্তনকে কীভাবে হ্রাস করা যায়, এ লক্ষ্যে প্রতিবছরই আয়োজিত হচ্ছে কপ বা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। আমাদের আজকের আয়োজন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের খুঁটিনাটি নিয়ে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য

নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন আজহারুল ইসলাম অভি

বিশ্বের প্রথম জলবায়ু সম্মেলন

‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস টু দ্য ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে কপ। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনই মূলত কপ নামে পরিচিত। এই সম্মেলন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে। সেখানে মূলত ১৯৯২ সালে কিয়োটো প্রটোকলে সই করা দেশগুলো অংশ নিয়েছিল। ওই বছরই প্রথমবারের মতো কিছু দেশ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল। ওই দেশগুলোই পরে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সই করে। কিয়োটো প্রটোকল হলো একটি বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তিÑ যা এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের জন্য দায়বদ্ধ করে।

সর্বকালের বৃহত্তম জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন

কপ-২৮ সম্মেলনকে জাতিসংঘের সর্বকালের বৃহত্তম জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন হিসেবে বলা হচ্ছে। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৮ দেশ ও অঞ্চলের ৭০ হাজারের বেশি প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী যোগ দিয়েছেন। ১৯৯২ সালে শুরু হওয়ার পর কপের আর কোনো সম্মেলনে এত মানুষ অংশ নেয়নি। গত বছর মিসরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন নিবন্ধিত ৫০ হাজার জন। এ বছরের সম্মেলনের অতিথি তালিকায় রয়েছেন বিল গেটস, এলভিএমএইচের প্রধান বার্নার্ড আর্নল্টের ছেলে অ্যান্তোনি আর্নল্ট, বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কও। এ ছাড়া রয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি।



ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী

জলবায়ুবিষয়ক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) সমর্থিত বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি (জিসিসিএম) তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার দুপুরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৮) ফাঁকে একটি উচ্চস্তরের প্যানেল অধিবেশনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস এবং আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। কপ ২৮-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং পরিবেশবিদ হাছান মাহমুদ এ সময় ‘অভিযোজন ও সহনশীলতার জন্য জলবায়ু গতিশীলতাকে বাগে আনা’ শীর্ষক উচ্চস্তরের এ প্যানেল অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।



কপ৩৩ আয়োজনের প্রস্তাব মোদির

আগামী ২০২৮ সালে ভারতে কপ৩৩ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১ ডিসেম্বর জলবায়ুবিষয়ক জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলন কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৮তম আসরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব দেন। এক প্রতিবেদনে হিন্দুস্থান টাইম জানিয়েছে, গত শুক্রবার ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারত জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়ার জন্য জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্কের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কারণে এই পর্যায় থেকে আমি ২০২৮ সালে ভারতে কপ৩৩ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করছি।’

কপ সম্মেলনে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তহবিল

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৮তম আসর। এটি চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ুভিত্তিক প্রকল্পগুলোয় অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে এই সম্মেলনে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি নতুন বেসরকারি বিনিয়োগ তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঘোষিত তহবিলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলতেরা’। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় এ তহবিলটি বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি বিনিয়োগ তহবিল হতে যাচ্ছে।

ইউএইর প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সম্মেলনে বলেন, ‘আমি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট সমাধানে ৩ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠনের ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত।’ এক বিবৃতিতে বলা হয়, কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি সুলতান আল জাবের এই নতুন তহবিল বোর্ডের প্রধান হবেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি এডিএনওসিরও প্রধান। দেশটি আশা করছে, আলতেরা নামক এ নতুন তহবিল ২০৩০ সাল নাগাদ মোট ২৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। এ তহবিলটিকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের একটি নতুন যুগের সূচনা বলে আখ্যায়িত করেছেন কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের। তিনি বলেন, ‘আলতেরার পরিধি ও কাঠামো জলবায়ুকেন্দ্রিক বিনিয়োগে একটি চক্রবৃদ্ধি প্রভাব তৈরি করবে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্মেলনের প্রথম দিনেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে তহবিল গঠন করেছেন প্রতিনিধিরা। যদিও এই তহবিলে কোন দেশ কী পরিমাণ অনুদান দেবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি; তবুও ইতোমধ্যে বেশকিছু দেশ অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরই মধ্যে কপ-২৮ সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জার্মানি ১০ কোটি, ব্রিটেন ৫ কোটি ১০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ এবং জাপান ১ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।