এবারের সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
এবারের সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মূল্যায়ন : কপ-২১ সম্মেলনে চলতি শতাব্দীতে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি চুক্তি হয়। এটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হিসেবে পরিচিত। প্যারিস চুক্তির মূল কথা ছিল, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি চলতি শতাব্দীতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে দেওয়া যাবে না। পারলে তা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে আটকে রাখতে হবে। প্যারিস চুক্তিতে ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চল স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী স্বাক্ষরকারীরা উষ্ণতা বৃদ্ধি কমানোর জন্য কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মতো কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণকারী জ্বালানি এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকারী কর্মকাণ্ড কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশ ধাপে ধাপে কীভাবে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনবে, এর একটি রূপরেখা দেওয়ার কথা ছিল। তা এনডিসি হিসেবে পরিচিত। পাঁচ বছর অন্তর তা হালনাগাদ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব দেশ নিজেদের রূপরেখা উপস্থাপন করেনি। এবারের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো স্বাক্ষরকারীরা নিজেদের এনডিসি হাজির করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যারা তা উপস্থাপন করেছে, সেসব দেশ ২০২৫ সালের নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করবে। তাই দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির একটি বড় ধরনের মূল্যায়ন হতে যাচ্ছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ : ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত কপ ২৬-এ প্রায় সব দেশ কয়লার ব্যবহার কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়। কিন্তু জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সবাই নীরব ছিলেন। অথচ পৃথিবীর উষ্ণায়নের পেছনে জীবাশ্ম জ্বালানির ভূমিকাই এককভাব সবচেয়ে বেশি। এবারের সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে বন্ধ করা হবে, তা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হবে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো এর পক্ষে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। গত জুলাইয়ে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে জোটের সদস্যরা একমত হতে পারেননি। দুবাইয়ে কপ-২৮ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট সুলতান আল জাবের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়ে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা ‘অনিবার্য’।

মিথেন চুক্তির সম্ভাবনা : ২০২১ সালের গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে আমেরিকা এবং ইইউ গ্লোবাল মিথেন প্লেজ নামের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০২০ সালের তুলনায় মিথেনের নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবটিতে ১৫০টির বেশি দেশ সই করে। এবারের সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করার জন্য বিভিন্ন পক্ষ চাপ দিচ্ছে। স্বাগতিক দেশ আমিরাতের কপ-২৮ প্রেসিডেন্সিও মিথেনের নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে এটি করতে পারে, এ জন্য তহবিল গঠনের কথা বলেছে দেশটি। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকেও এগিয়ে আসতে আহ্বান জানানো হয়েছে। আমেরিকা, ইইউ, চীন ও আয়োজক দেশ আরব আমিরাত একমত হওয়ায় এবারের সম্মেলনে মিথেন নিয়ে একটি চুক্তি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

ক্লিন এনার্জি : পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করতে প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে নয়ায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা নিয়েও এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা ক্লিন এনার্জির ব্যবহার দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব প্রকাশ করেছে ইইউ, ইউএসএ এবং ইউএই। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনসহ জি ২০-এর অধিকাংশ দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি মনোযোগ বাড়িয়েছে। তাই প্রস্তাবটি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।