রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রকট হবে অর্থনৈতিক সংকট
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সহিংসতা আরও দীর্ঘায়িত হলে দেশের অর্থনীতি চরম সংকটের মধ্যে পড়বে বলে মনে করে উন্নয়ন সহযোগীরা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)- তিনটি সংস্থাই বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পৃথক পর্যবেক্ষণে এ আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশের উন্নয়ন হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সাড়ে ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছর ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সংস্থাটির মতে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কমবে কর্মসংস্থানও। ব্যবসা-বিনিয়োগের গতিও মন্থর রয়েছে আরও আগে থেকেই। এ ছাড়া আস্থার সংকটের কারণে নতুন কোনো বিনিয়োগও আসছে না।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। নির্বাচনের পর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সম্প্রতি আরেক উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে দীর্ঘ এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচনী অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের আর্থিক খাতও ঝুঁকিতে রয়েছে, যার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে চলতি বছর শেষে। একই সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশের আর্থিক খাতের সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটি মনে করে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।
আরেক বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) সম্প্রতি একই রকম পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমবে। এডিবি মনে করে, চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। একই সঙ্গে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে ভারতে ৬ শতাংশ এবং চীনে ৪ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব সময় অর্থনৈতিক ইস্যুতে প্রাধান্য পায়, তাই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে না।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য জরুরি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম