মৌসুমেও আলু পেঁয়াজে ভোক্তার পকেট কাটা

রেজাউল রেজা
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
মৌসুমেও আলু পেঁয়াজে ভোক্তার পকেট কাটা

বাজারে নতুন আলু ও পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ সত্ত্বেও এ দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দামে এর প্রভাব পড়েনি। উল্টো ভরা মৌসুমে এসে আলুর দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ভোক্তাদের এখনো প্রতিকেজি আলুতে ৩৪ টাকা এবং পেঁয়াজে ৫৫ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। বাজারে এ দুটি পণ্যের সংকট না থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কাটছে; হাতিয়ে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা।

ব্যবসায়ীরা এতদিন সরবরাহ সংকটের যুক্তি দেখালেও রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে নতুন আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহে কমতি নেই। সাধারণত ভরা মৌসুমে সরবরাহ বাড়লে বাজারে দাম কমে আসে এমনিতেই। গত বছর মৌসুমের আগের কিছুদিন এ দুটি পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হলেও মৌসুম আসার পর আলু ২০-২৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৩০-৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছরের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। নতুন মৌসুমে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও পেঁয়াজের দাম এখনো আকাশচুম্বী। বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ টন। এ ছাড়া চলতি বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ হাজার টন। এই মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে এবং বাজারে থাকবে আগামী তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এরপর মূল পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। রাজধানীর শ্যামবাজারে পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী কানাই সাহা বলেন, সাধারণত এমন সময় নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসে। গত বছরও কমেছিল। কিন্তু এবার সেভাবে কমছে না। হয়তো সামনে কমবে।

রাজধানীর প্রতিটি কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত নতুন আলু দেখা যাচ্ছে। এর পরও পুরনো আলুর দাম কমেনি বরং চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. সোলায়মান বলেন, মাত্র দুদিনের ব্যবধানে পুরনো আলুর দাম পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা পৌঁছে গেছে। এই আলু খুচরায় আজ ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিন দিন আগে যা ৬০ টাকা ছিল।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, পুরনো আলুর মজুদ প্রায় শেষ। আগামী মার্চ থেকে নতুন করে আলু মজুদ শুরু হবে। তবে বাজারে এখন নতুন আলু উঠছে। দাম কমে আসবে।

এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের এমন সময়ের তুলনায় বর্তমানে পেঁয়াজ ১৯৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও আলু ১৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর ভরা মৌসুমে আড়াইগুণ দামে আলু এবং তিনগুণ দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

বারবার ছাড় পেয়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যে কারসাজি করে অল্প সময়ের মধ্যে অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে পেঁয়াজের বাজারে যেটা হলো সেটা ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। আগের আনা কম দামের পেঁয়াজ এখনো শেষ হয়নি। তার ওপর এখন পেঁয়াজের মৌসুম। অথচ বাজারে দাম এখনো

১০০ টাকার ওপরে। ভরা মৌসুমে আলুর বাজারেও একই চিত্র। আসলে ব্যবসার ক্ষেত্রে দেশে সুশাসনের প্রচণ্ড রকম ঘাটতি রয়েছে। অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ায় অজুহাত পেলেই বারবার দামের কারসাজি হচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিমের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজেরও যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তখন খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দাম বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো এর পরও দাম বেড়েছে। ভোক্তারা আশা করেছিলেন, নতুন মৌসুমের আলু ও পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমে আসবে।

শান্তিনগর বাজারের একজন ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাকিব মোল্লা বলছিলেন, বর্তমানে জীবনযাত্রার প্রতিটি পর্যায়ে খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাজারে অত্যধিক বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ, আলুতে ভরা বাজার। অথচ কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। অবশ্য প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যে জিম্মি করে আমাদের কষ্টে উপার্জিত টাকা লুটে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।