ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল

প্রয়াত জয়নুল হক সিকদার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে ফেলা হয়েছে; গঠন করা হয়েছে নতুন পর্ষদ। নিয়ম না মেনে ঋণ অনুমোদন ও পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পর্ষদ বাতিলের পর সাত সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক দুই আদেশে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এবং জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন

ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে। তিনি বর্তমানে মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া নতুন পর্ষদে জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে পারভীন হক সিকদার রয়েছেন। তবে তার স্ত্রী মনোয়ারা হক সিকদার এবং দুই ছেলে রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মনোয়ারা হক সিকদার ব্যাংকের সদ্য বাতিল করা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। রন এবং রিক হক সিকদার ছিলেন পরিচালক। দুই স্বতন্ত্র পরিচালক মো. নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা ও মুর্শিদ কুলি খানও নতুন পর্ষদে বাদ পড়েছেন।

জানা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পারভীন হক সিকদার বিএসইসিকে এক চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী নির্বাচনে কারচুপি করতে পারে বিদ্যমান পর্ষদ। এই চিঠির পর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয় বিএসইসি। ওই চিঠির পর পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গতকাল আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকটির পর্ষদের দায়িত্ব ছিল আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু তারা সেটি না করতে পারায় আগের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। নতুন পর্ষদে স্থান পেয়েছেন আগের পরিচালনা পরিষদের তিন পরিচালক। বাকি পরিচালকদের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগের পর্ষদে মোট পরিচালক সংখ্যা ছিলেন আটজন।?

বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকটিকে রক্ষায় আমরা বুধবার বৈঠক করে বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিই। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিই।’

সাত সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন। পর্ষদের বাকি পাঁচজন হলেন- পরিচালক পারভীন হক সিকদার, উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমান, সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ও উদ্যোক্তা শেয়ারধারী হিসেবে পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী যেখানে একক পরিবার, ব্যক্তি বা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারে। নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত শেয়ার তিন মাসের মধ্যে বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে গত ১৩ জুলাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে না করায় আইনের ১৪ক (৫) ধারায় তা সরকারের অনুকূলে কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না, তা ১৪ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২১ নভেম্বর চিঠি দেওয়া হয়। অন্যদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে থাকা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চলমান বিরোধ সম্প্রতি আদালতে গড়ায়। ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে পর্ষদ থেকে বাদ পড়তে পারেন- এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বার্ষিক সাধারণ সভায় স্থিতাবস্থা দেন আদালত।