ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের বেশি হলে বীমা ব্যবসা নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের বেশি হলে বীমা ব্যবসা নয়

কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি হলে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ বা বীমা ব্যবসায় অযোগ্য বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে মূলধন সংকট, ক্রেডিট ও ক্যামেলস রেটিংয়ের মান কম হলে এবং টানা তিন বছর নিট মুনাফায় না থাকলে ওই সব ব্যাংক বীমাপণ্য ব্যবসা করতে পারবে না। গতকাল ব্যাংকের মাধ্যমে বীমাপণ্য বিক্রির নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বীমাপণ্য ব্যবসার যোগ্যতা অর্জনের মানদ- ঠিক করে দেওয়া হয়। ফলে চাইলেই সব ব্যাংক এ ব্যবসা চালু করতে পারবে না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৭(১)(ল) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনক্রমে সকল তফসিলি

ব্যাংক বীমা কোম্পানির ‘করপোরেট এজেন্ট’ হিসেবে বীমাপণ্য বিপণন ও বিক্রয় ব্যবসা ১২ ডিসেম্বর থেকে করতে পারবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ হলোÑ ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ব্যাংক তার গ্রাহকদের নিকট বীমাপণ্য বিপণন ও বিক্রয় করতে পারবে। তবে এ জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে করপোরেট এজেন্ট লাইসেন্স নিতে হবে।

ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসা করতে হলে ব্যাংকের অবশ্যই ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত বা ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) সাড়ে ১২ শতাংশ থাকতে হবে। ব্যাসেল৩ অনুযায়ী ক্রেডিট রেটিং গ্রেড ২-এর কম হতে পারবে না। ন্যূনতম ক্যামেলস রেটিং-২ পূরণ করতে হবে। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ ব্যবসায় অযোগ্য হবে। এ ছাড়া ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসার অনুমোদন পেতে হলে ব্যাংকগুলোকে সর্বশেষ তিন বছর ইতিবাচক নিট মুনাফায় থাকতে হবে। এ ব্যবসার জন্য ব্যাংকগুলোর একটি কার্যকর ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসার পরিকল্পনাও থাকতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী দেশে ৬১ তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৩৪টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি। এসব ব্যাংক বীমার করপোরেট গ্রাহক হতে বাদ পড়বে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ এবং বিশেষায়িত ২টি ব্যাংকের খেলাপির কারণে গ্রাহক হতে পারবে না। অপরদিকে ২৭ ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের কম হওয়ায় গ্রাহক হতে পারবে। তবে শর্তানুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক মোট ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৭টি এবং বিদেশি ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৭টি ব্যাংকস্যুরেন্স হওয়ার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত। এ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে তিন বছরের মুনাফা করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যাও কম।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি সংশোধন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। চুক্তির মেয়াদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চুক্তি নবায়ন বা মেয়াদ বাড়ানো হালনাগাদ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। বীমার পলিসি হোল্ডারের পরিষেবা পেতে ধারাবাহিক সহযোগিতা করবে বীমা কোম্পানিগুলো। বীমার গ্রাহক বীমার মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্য অর্থ যেন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়টি ব্যাংকেই নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের অনুকূলে বীমা পলিসি নবায়নের কমিশন চলমান থাকবে।

এতে বলা হয়েছে, প্রতি ৩ বছর পর পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি পর্যালোচনা করতে হবে। বিদ্যমান চুক্তির নবায়ন বা সংশোধন করা হলে ব্যাংকসমূহ তা লিখিতভাবে নবায়ন বা সংশোধনের ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। ব্যাংক কোনোভাবেই বীমা গ্রাহককে অস্পষ্ট তথ্য দিতে পারবে না। ব্যাংকাস্যুরেন্স ম্যানেজার বা দায়িত্বরত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের গ্রাহকের নিকট বীমাপণ্য বিক্রয় করতে পারবে না। ব্যাংক বীমাকারীর বীমা সংক্রান্ত কোনো ঝুঁকি গ্রহণ করবে না এবং বীমাকারী হিসেবে কাজ করবে তার স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে হবে। ব্যাংকের গ্রাহকরা নিজেদের হিসাব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বীমার প্রিমিয়ামের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রধান বীমা কর্মকর্তাকে কমপক্ষে স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে। ব্যাংক অথবা বীমা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর ব্যাংকাস্যুরেন্স ম্যানেজারকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। বীমার জন্য শাখা নেটওয়ার্ক, বিক্রয় নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল মাধ্যম বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। এ ছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কর্তৃক নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী বীমাকারী এবং ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কমিশন নির্ধারণ করবে।