পতাকার জন্য জীবন দেন সুফিয়া খাতুন

সৈয়দ রিফাত
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
পতাকার জন্য জীবন দেন সুফিয়া খাতুন


একাত্তরে স্বামী আর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সুফিয়া খাতুন থাকতেন সৈয়দপুরের আতিয়ার কলোনিতে। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই রেলে চাকরি করা স্বামীর পোস্টিং হয় পাবনা জেলার পাকশীতে। ফলে ছেলেমেয়ে নিয়ে থেকে যান সুফিয়া খাতুন। মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এলে দশম শ্রেণিতে পড়া সুফিয়ার একমাত্র ছেলে মুরাদ হোসেন যুদ্ধে যেতে চায়। চোখের জলে মা দেশের জন্য বিদায় দেন ছেলেকে। যাওয়ার আগে ছেলে বাড়ির ছাদে উত্তোলন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। একাত্তরের এপ্রিল মাসেও সেই পতাকা উড়ছিল অবরুদ্ধ সৈয়দপুরের আকাশে। একাত্তরের অবাঙালি এবং পাকিস্তানের দোসররা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলতে বলেছিল সুফিয়াকে। পতাকা না নামানোর জন্য শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হয় সুফিয়া খাতুনকে।

সুফিয়া খাতুন শহীদ হন একাত্তর সালের এপ্রিল মাসে। তখনও ছেলে মুরাদ হোসেন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ভারতের শিলিগুড়ি ক্যাম্পে। মায়ের মৃত্যুর খবর

তিনি জানতে পারেন জুন মাসে। মুষড়ে পড়েন যুদ্ধক্ষেত্রেই। তবে পরক্ষণেই দ্বিগুণ ক্রোধে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতাকে মুক্ত করার যুদ্ধে। মুরাদ হোসেন বলেন, ‘হানাদার বাহিনী মাকে হত্যা করে এটা জানতে পারি অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে। তবে তখনো জানতাম না কী নির্মমভাবে তারা আমার মাকে হত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে প্রতিবেশী একজন আমাকে জানায়, ১৪ এপ্রিল দুপুরে স্থানীয় কিছু অবাঙালি এসে মাকে বলে ছাদ থেকে পতাকা নামিয়ে ফেলতে। মা তাদের জানিয়ে দেন পতাকা নামাবেন না। তখন ওই দলটি ফিরে যায়। তবে রাতে হানাদার বাহিনীসহ তারা আবার আসে। মা তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। সেই অবস্থায় ওরা আমার মায়ের  শিরশ্ছেদ করে।

মায়ের রক্তে ভেজা সেই কোরআন শরিফ মুরাদ হোসেন হাতে পান যুদ্ধের পর। আজও নিজের কাছে সযতেœ রেখে দিয়েছেন মায়ের শেষ স্মৃতিটুকু। ১৯৭১ সালে তিনি যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের চিলাহাটি সাবসেক্টরে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল হাসানের নেতৃত্বে। বিজয়ের কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেছেন রাজবাড়ীতেও। যে পতাকা রক্ষার জন্য শহীদ হন মা সুফিয়া খাতুন, সেই পতাকা নিজের হাতে টানিয়েছিলেন তিনি। মুরাদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এলে আমি বাড়ির ওপর একটা কালো পতাকা ও একটা বাংলাদেশের পতাকা টানাই। শেষ দিন পর্যন্ত মা সে পতাকার সম্মান অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন।

৫২ বছরে কোরআন শরিফে লাগা মায়ের রক্তের দাগ অনেকটাই শুকিয়ে গেছে, তবে মা হারানোর ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন মুরাদ হোসেন।