বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা
দুই যুগ আগে চালু হওয়া দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দৃশ্যপটে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখা গেছে চ্যালেঞ্জিং ভবিষ্যৎ, চাকরির বাজারের চাহিদা এবং তরুণদের আকর্ষণীয় ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তুলতে বেশ আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম অফার করার চেষ্টা করছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
প্রাচীন যুগ থেকে বলা হয়, ‘সেই শহরে বসবাস করা নিশ্চয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, যে শহরে কিনা একজনও আইনজীবী নেই।’ আইন পেশা হচ্ছে পৃথিবীর সব অভিজাত পেশার অন্যতম। আর এ অভিজাত পেশার মানুষগুলোর নামের আগে ‘বিজ্ঞ’ শব্দটি ব্যবহার করতে হয় অর্থাৎ ‘বিজ্ঞ আইনজীবী’ বলার মাধ্যমে এ পেশার আভিজাত্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়। অনিপুণ সৌন্দর্যে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, উচ্চশিক্ষা, বহুমুখী ক্যারিয়ার, স্বতন্ত্রভাবে কাজের সুযোগের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের কারণে তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় বিষয় ‘আইন’।
কাজের অনেক ক্ষেত্র : বলাই বাহুল্য, আইন পেশায় এখন যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা ও সম্ভাবনা। আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বহুজাতিক কোম্পানি ও এনজিওতে আছে আইন কর্মকর্তা বা প্যানেল আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ। রয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিম্ন আদালতে যোগ দেওয়ার সুযোগ
আরও পড়ুন:
বিলিয়নিয়ার দুই সহোদরের গল্প
পড়াশোনা : আইন বিষয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে মৌলিকভাব আইনের বিজ্ঞান, দর্শন ও ব্যাকরণ হিসেবে পরিচিত ‘জুরিসপ্রুডেন্স’ পড়তে হয়। আইনের একেবারে প্রাথমিক ও অপরিহার্য বিষয়গুলো এতে শেখানো হয়। এ ছাড়া মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন বিভাগে সাংবিধানিক আইন, পারিবারিক আইন, ধর্মীয় আইন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো দেশের জন্য অপরিহার্য আন্তর্জাতিক আইন, ভূমি আইন, ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত আইন, পরিবেশ আইন, অপরাধ আইন, সমুদ্র আইন, সিপিসি, সিআরপিসি পড়ানো হয়। এর বাইরে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মানবাধিকার আইন, রিয়েল এস্টেট আইন, সাইবার আইন, আয়কর আইন, চুক্তি ও বাণিজ্যিক আইনের মতো কিছু বিশেষায়িত বিষয় পড়ানো হয়।
ভর্তি যোগ্যতা : আইনজ্ঞদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় বিষয় ‘আইন’। আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে যে কোনো বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ থাকে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আইন পড়ার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে হচ্ছে। রাজধানীর বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যোগ্যতার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসির) নিয়মে স্পষ্ট করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা সংক্রান্ত নিয়মে বলা হয়েছে, এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পাবলিক পরীক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে অবশ্যই ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ অথবা জিপিএ ২.৫০ অথবা সমমানের গ্রেড থাকতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.০০ থাকলে উভয় পরীক্ষায় অবশ্যই মোট জিপিএ অন্যূন ৬.০০ থাকতে হবে। তবে তালিকায় ওপরের দিকে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য এর চেয়েও বেশি ফলাফল নির্ধারণ করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
চাকরি আছে
কোথায় পড়বেন : দেশজুড়ে বর্তমানে ১১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটিতেই আইনের জন্য এলএলবি অনার্স কোর্স চালু আছে। তবে ভর্তি হওয়ার আগে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন, শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি দেখতে পারেন বিশ্বের নামকরা, র?্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক সহযোগিতা চুক্তি আছে কিনা তাও দেখতে পারেন।
খরচ : এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে পড়াশোনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, দেশের কোন অঞ্চলে অবস্থান আর প্রতিষ্ঠানভেদে খরচে তারতম্য দেখা যায়। তবে মোটামুটি হিসেবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি (অনার্স) সম্পন্ন করতে আনুমানিক ৪ থেকে ১০ লাখ টাকার মতো খরচ গুনতে হতে পারে।
আরও পড়ুন:
স্বপ্নপূরণের ৩ অস্ত্র