কাল ছাড় হতে পারে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
কাল ছাড় হতে পারে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি

৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবটি আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বোর্ডসভায় তোলা হচ্ছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে আগামীকাল বুধবার এই কিস্তির প্রায় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করা হতে পারে। তবে বাংলাদেশ দুটি শর্ত পূরণ করতে না পারায় দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর পরও দাতা সংস্থাটির সঙ্গে স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ায় প্রস্তাবটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। ফেব্রুয়ারিতে ছাড় করা হয় ৭ কিস্তির প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় নির্ধারণ করা হয় ডিসেম্বর। ঋণ পেতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।

এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল সংস্থাটির প্রস্তাবিত বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন এবং তাদের দেওয়া রোডম্যাপ অনুযায়ী নিট রিজার্ভ ধরে রাখার সিলিং পূরণ। এ ছাড়া আর্থিক খাত সংস্কারের আওতায় অন্য শর্তগুলোর মধ্যে ছিল- ডলারের বিনিময় হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বন্ধ করে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, সুদহার টার্গেটটি মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। চলতি বছরের প্রথমার্ধে আইএমএফ নির্ধারিত ছয়টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাংলাদেশ দুটি অর্জন করতে পারেনি। এগুলো হলো- ন্যূনতম রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা।

জানা যায়, গত জুন শেষে ন্যূনতম ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রাখার শর্ত দিয়েছিল দাতা সংস্থাটি। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম ছিল রিজার্ভ। মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্যের দাম পরিশোধে সরকারকে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছিল বলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল আইএমএফ। এর বিপরীতে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহ সম্ভব হয়। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা কম ছিল।

গত ৪ অক্টোবরে দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফর করে আইএমএফের স্টাফ মিশনের সদস্যরা ঋণের শর্তগুলো পর্যালোচনা করে। এ সময় সংস্থাটি ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করে বাস্তবতার নিরিখে এই দুটি শর্ত সংশোধনের বিষয়েও নমনীয়তা দেখায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা দাতা সংস্থাটির সব শর্তই পূরণের চেষ্টা করেছি। তবে মোটা দাগে নিট রিজার্ভ ও রাজস্বের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছি। কি কারণে এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়নি সেটা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারাও বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সেটা বুঝতে সক্ষম হন। এ কারণে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে স্টাফ লেভেলেই অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। আর স্টাফ লেভেলে অ্যাগ্রিমেন্ট মানেই হলো উভয় পক্ষেরই সম্মতি আছে। বোর্ডের অনুমোদন শুধু আনুষ্ঠনিকতা।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ রকম খুব কম কেস আছে, স্টাফ লেভেলে অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার পরে বোর্ডে সেই প্রস্তাবটি বাতিল হয়েছে।