প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির সিন্ডিকেট
রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষায় ‘ডিভাইস ও কন্ট্রাক্ট পার্টি’র দৌরাত্ম্য ঠেকানো যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো জানিয়েছে, এবার জালিয়াতিতে সক্রিয় ছিল শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাদের সমন্বয়ে শক্তিশালী এক চক্র। কয়েকশ পরীক্ষার্থী এই সিন্ডিকেটের হাতে জনপ্রতি ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন।
গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চক্রের ১৩ সদস্য, পরীক্ষার্থীসহ ১২৪ জনকে (রংপুর বিভাগে ৯৬ জন ও বরিশাল বিভাগে ২৮ জন) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
র্যাব সূত্র জানায়, ‘ডিভাইস ও কন্ট্রাক্ট পার্টি’র সদস্যরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র বাইরে নিয়ে আসে। কেন্দ্রের বাইরে তাদের ‘এক্সপার্ট গ্রুপ’ দ্রুত প্রশ্ন সমাধান করে তার অনুলিপি ডিভাইসের মাধ্যমে কেন্দ্রের ভেতরে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ব্লুটুথের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কানের সঙ্গে যুক্ত থাকে অত্যাধুনিক ডিভাইস। সেই ডিভাইসের সঙ্গে বাইরের চক্র যুক্ত থাকে। পরীক্ষার্থীর ডিভাইসে কল স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হলে পরীক্ষার্থীরা শুনে উত্তর লিখে দেয়।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে গাইবান্ধায় ৩৭ জন ধরা পড়েছেন র্যাবের জালে। র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের কর্মকর্তা (গণমাধ্যম) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ বলেন, গাইবান্ধার বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে জালিয়াতচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেনÑ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, রেলওয়ের কর্মী মারুফ হাসান, মুন্না মিয়া, সোহাগ রহমান ও সোহেল রানা।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
রংপুরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ১১ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনের মধ্যে তিনজন শিক্ষক ও পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতা। এ ছাড়া বহিষ্কার করা হয়েছে ৮৩ জনকে। রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল হোসেন, লায়ন্স কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. নুরুন্নবী ও কাউনিয়ার টেপামধুপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মো. রেজওয়ান রয়েছেন। এ ছাড়া রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আল মাহাদী খান হৃদয়, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ সাহা, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন দুখু ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সেতুও রয়েছেন।
দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানার কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানায়, জেলা সদরের ৮টি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ১৮ পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবীর সাত পরীক্ষার্থীকে আটকের কথা জানান।
এ ছাড়া বিশেষ কায়দায় মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর লেখার অভিযোগে নাগেশ্বরীতে দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার ও বদলি হিসেবে (প্রক্সি) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে হবিগঞ্জে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার; পঞ্চগড়ে পরীক্ষার্থীসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার; ভোলায় ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া একই অভিযোগে লালমনিরহাটে ১৩ পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার; কুড়িগ্রামে ৩ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার এবং ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতচক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে আরও যাদের নাম আসবে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।