পাকিস্তান থেকে যাওয়া ট্যাক্সিচালকের ২ ছেলে খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে
কিশোর বয়সে পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতেন নাইম আহমেদ। তবে ২০০১ সালে উন্নত জীবনের আশায় পাকিস্তান ছেড়ে নতুন বিয়ে করা স্ত্রী মুশরাত হুসাইনকে নিয়ে চলে যান ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে। জীবনধারণের জন্য ট্যাক্সি চালাতে হয়েছে তাকে। লক্ষ্য একটাই ছিল, তিন ছেলেকে একটি উন্নত জীবন দেওয়া।
সেই নাইম আহমেদের দুই ছেলেই এখন খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন নাইমের দ্বিতীয় সন্তান রেহান আহমেদ। এক বছর পর পাকিস্তানের কাশ্মির থেকে আসা নাইমের কনিষ্ঠ সন্তান ফারহান আহমেদ জায়গা করে নিয়েছে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে।
এক সাক্ষাৎকারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নাইম বলেন, ‘ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার হতে চেয়েছিলাম আমি। ইংল্যান্ডে আসার আগে ক্লাব লেভেল পর্যন্ত খেলেছি আমি। কিন্তু কখনোই সন্তানদের ক্রিকেট খেলার জন্য চাপ দেইনি। রাহিম (বড় ছেলে) ও রেহান একই বয়সভিত্তিক দলে ছিল। আমাদের বাড়ি হয়ে উঠেছিল ছোট খেলার মাঠ। তাদের সঙ্গে আমিও যোগ দিতাম মাঝেমধ্যে।...মনে হয়, এখন আমি চাঁদের ওপরে আছি।’
সন্তানদের কারণে এখন বিশ্ব-পর্যটক হয়ে গেছেন নাইম। কারণ, বিভিন্ন দেশে তাদের সঙ্গে যেতে হয় তাকে। তিনি বলেন, ‘তাদের কারণে আমি একজন বিশ্ব-পর্যটকে পরিণত হয়েছি। গত মাসে আমি ভারতে ছিলাম, ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ফারহানের খেলা দেখতে। আমি এখন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে, ইংল্যান্ডের হয়ে রেহানের খেলা দেখতে এসেছি। আমার ভেতরের ‘‘ক্রিকেটারসত্ত্ব ‘’ এখন সন্তুষ্ট, পিতা হিসেবে খুশি।’
গর্বিত এই পিতা ছোট ছেলে ফারহানকে নিয়ে বলেন, ‘সে আধুনিক সময়ের অফ স্পিনার। তার বয়স মাত্র ১৫, তাই তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো বলা কঠিন। আমার মনে হয় সে ক্রমেই ভালো করবে। আমি তাকে বলেছি, উপভোগ করতে। একই কথা বলেছিলাম রেহানকে, যখন সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়। এই বয়সে তার চাপহীনভাবেই খেলা উচিত।’
পরিবারের ছোট দুইজন ইংল্যান্ডের হয়ে খেললেও নাইম মনে করেন তার বড় ছেলে রাহিমই সবচেয়ে প্রতিভাবান। ইনজুরিতে না পড়লে সেও খেলতে পারত ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে। তার ভবিষ্যৎ নিয়েও আশাবাদী বাবা।
গত বছর অভিষেক হলেও রেহান ১১ বছর বয়সেই নজর কেড়েছিলেন বলে জানালেন নাইম। নেটে তখন বেন স্টোকস ও অ্যালিস্টার কুকের মতো ক্রিকেটারদের আউট করেছিলেন রেহান। এর পরে লর্ডসের নেটে বোলিং করতে দেখে বিখ্যাত লেগ স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নও রেহানের প্রশংসা করেন।
ছেলেরা আইপিএল খেলুক, এমনটিও চান নাইম। বলেন, ‘আমি চাই আমার তিন ছেলেই আইপিএলে (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) খেলুক। লিগটিতে খেলা, বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করা এবং তাদের সঙ্গে অনুশীলন রেহানকে আরও ভালো ক্রিকেটারে পরিণত করবে।’