জলবায়ু নিয়ে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা

গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ

দুবাই থেকে আসাদুর রহমান
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
জলবায়ু নিয়ে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা

বৈশ্বিক উষ্ণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণের ফলে উষ্ণতা, বন্যা, বরফ গলাসহ পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে পৃথিবী। গতকাল বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৮) বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বের ১২০ জন বিজ্ঞানী। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে ২০৩০ সালে আরও তিনটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ দৃশ্যমান হবে। এ জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি বিজ্ঞানভিত্তিক হারে কমাতে হবে। কার্বন নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে কমাতে হবে ৪৫ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন।

দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে গতকাল সপ্তম দিন আলোচনা শুরুর পর বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রেকর্ড কার্বন নির্গমনের নতুন হিসাব তুলে ধরেন। তারা জানান, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ২০২৩ সালে কার্বন নির্গমন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কার্বন নির্গমন পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে গত দুই বছরে আরও অবনতি হয়েছে। এই নির্গমনের পরিমাণ এ বছর ৪০ দশমিক ৯ গিগা টনে গিয়ে পৌঁছাবে।

গতকাল ক্লাব অব রোমের ৭৫ বিজ্ঞানী কপ নেতাদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তারা কপ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানান। খোলা চিঠিতে তারা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই। ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু শূন্য কার্বন নির্গমন নিশ্চিত করলেই হবে না, বরং ওই সময় পর্যন্ত বিশ্বে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকবে, তা শোষণ করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।

জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে এসব রিপোর্ট পরিবেশবাদীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তারা দিনভর জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের ভেতরে নানা স্লোগানে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে জলবাযু সম্মেলনের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের দাবি হলো- এবারের জলবায়ু সম্মেলনেই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।

গতকাল এক ব্রিফিংয়ে কপ২৮ প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের জানান, চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পাঁচ দিনে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে অন্তত ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার জমা হয়েছে। পাঁচ দিনে চুক্তি হয়েছে ১১টি। চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে- খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রথম ঘোষণা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পগুলোকে ডিকার্বোনাইজ করার উদ্যোগ।

দূষণ না করেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালদ্বীপসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এবারের সম্মেলনে শুরু হওয়া ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন মালদ্বীপের জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও জ্বালানিমন্ত্রী তরিক ইব্রাহিম। দুবাইয়ে এক্সপো সিটিতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের সপ্তম দিনে একটি সাইড লাইন ইভেন্টে তিনি এ দাবি জানান।

এদিকে সম্মেলনে ‘ইনোভেশন ইন ডেভেলপিং ফাইন্যান্স’ ক্যাটাগরিতে ‘গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন’ (জিসিএ) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। লোকাল লিড অ্যাডাপটেশন (এলএলএ) ক্যাটাগরিতে এ চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকার ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প। প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), সুইডেন, ডেনমার্ক, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রেসিলিয়েন্স হাবে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন ও সহনশীলতা বিনির্মাণে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এসব পুরস্কার দেওয়া হয়। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে কপ২৮ সম্মেলন কেন্দ্রে থাকা বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সৃজনশীল, প্রশংসনীয় এবং সম্প্রসারণযোগ্য প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করতে এবং জনগণকে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালে জিসিএ এলএলএ চ্যাম্পিয়ন্স অ্যাওয়ার্ডস চালু করা হয়।

চলমান সম্মেলন আজ বিরতি দিয়ে আগামীকাল আবার শুরু হবে।