কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল বুধবার চুক্তি সইয়ের পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে অন্তত আরও দুই মাস সময় লাগবে। শুরুতে যেসব জাহাজে ক্রেন আছে সেগুলো এই টার্মিনালে ভেড়ানো হবে। এর মধ্য দিয়ে বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে তিনটি টার্মিনাল পরিচালনা করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। সেখানে তারা কেবল জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি করে; যন্ত্রপাতি ও রক্ষণাবেক্ষণ চট্টগ্রাম বন্দরকে করতে হয়। তবে পিসিটিতে হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি নিজস্ব যন্ত্রপাতি স্থাপন করবে রেড সি গেটওয়ে হ্যান্ডলিং। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন খাতে ১৭০ মিলিয়ন (প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা) মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
তবে নতুন টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। তবে ব্যবসায়ীরা একে ইতিবাচক বলছেন। তারা মনে করেন, এতে প্রতিযোগিতা বাড়ার পাশাপাশি সেবার মানও বাড়বে।
জানা গেছে, ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’ পরিচালনায় সৌদি আরবের কোম্পানির সঙ্গে ২২ বছরের চুক্তি সই হয়েছে। সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের (জিটুজি) ভিত্তিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ও রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) কনসেশন চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আরএসজিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্স ও. ফ্লো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সৌদি আরবের বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ আল ফালি, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানসহ সৌদি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আমাদের সময়কে বলেন, গতকাল চুক্তি সই হয়েছে। আজ থেকে টার্মিনাল হস্তান্তরের কাজ শুরু হবে। আগামী ২ থেকে তিন মাসের মধ্যে অপারেশনাল কার্যক্রম চলবে। তবে শুরুতে যেসব জাহাজে ক্রেন রয়েছে সেগুলোই টার্মিনালে ভেড়ানো হবে। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন (জিউজিসি), রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ (আরটিজি) অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর পুরোপুরি হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চলবে। তারা আধুনিক টেকনোলজি ও ম্যানপাওয়ার ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করবে।
ওমর ফারুক বলেন, পিসিটি চালু হলে ৬ হাজার টিইইউস কন্টেইনারবাহী সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচে জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। টার্মিনালের ৫৮৪ মিটারের জেটিতে একই সময়ে তিনটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বছরে ৫ লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। নিজেদের দক্ষতা প্রমাণে সেবার মানও বাড়াবেন। এতে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সেবার মান মূল্যায়ন সম্ভব হবে। পিসিটি কার্যক্রম শুরু করলে পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বিদেশি অপারেটর নিশ্চয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে; এতে দ্রুত হ্যান্ডলিং কাজ শেষ হবে। তাদের সেবা ভালো হলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও বাড়ানোর চেষ্টা করবে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নকৃত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালের ১৩ জুন। ২৬ একর জায়গায় এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পিসিটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা অনুযায়ী সেনাবাহিনী ২০২২ সালে নির্মাণকাজ শেষ করে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম