এখনো বড় ঘাটতি আর্থিক হিসাবে
বিদেশের সঙ্গে লেনদেন পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি কমার সঙ্গে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় রয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে এখনো বড় ঘাটতি রয়েছে। কারণ সার্বিক ভারসাম্য পরিস্থিতির সেভাবে উন্নতি হচ্ছে না, যদিও গত অর্থবছরের তুলনায় সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি কিছুটা কমেছে।
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি প্রায় দেড় বিলিয়ন বেড়ে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারে ছাড়িয়ে যায়। তবে চলতি অর্থবছরে এসে এই ঘাটতি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ঋণ পরিশোধে প্রবল চাপে থাকা আর্থিক হিসাবেও মাসের ব্যবধানে ঘাটতি কিছুটা কমেছে। মূলত নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই ও পোর্টফলিও) ও নতুন ঋণ পাওয়া কমে যাওয়া এবং আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধের প্রবল চাপে আর্থিক হিসাবে এখনো বড় ঘাটতি রয়েছে। এর প্রভাবে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি আশানুরূপ কমছে না। তবে একই সময়ে আমদানি ব্যয় কমে আসা ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে প্রবাসী আয়ে ভর করে চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় রয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, কড়াকড়িসহ নানা পদক্ষেপে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ সময়ে বাংলাদেশের আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলার। এতে বিদেশের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৬২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। যদিও শুধু অক্টোবর মাসে নতুন করে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১৯৮ কোটি ডলার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ে ব্যবধান কমার সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবে ২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত বজায় রয়েছে। যদিও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ আরও বেশি ছিল, প্রায় ১১১ কোটি ডলার। তবে গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবে রেকর্ড প্রায় ৪৪৫ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।
এখনো বড় ঘাটতি আর্থিক হিসাবে : চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় থাকলেও আর্থিক হিসাবে ঘাটতি সেভাবে কমছে না। এ সময়ে আর্থিক হিসাবে ৩৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৪০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তবে গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ হিসাবে ১২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ছাড় কমে গেছে। নতুন ঋণও সেভাবে পাওনা যায়নি, উল্টো আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম চার মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ সময়ে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময়ে বৈদেশিক ঋণ সহায়তাও কমেছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যেখানে ১৩২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ঋণ সহায়তা এসেছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরে একই সময়ে এসেছে ৯০ কোটি ডলার। এ ছাড়া এ সময়ে নিট এফডিআই কমেছে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। নিট পোর্টফলিও বিনিয়োগও ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে, এর পরিমাণ ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি সামান্য কমেছে : আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি বজায় থাকায় প্রথম চার মাসে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে এই হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার।