চীন সরে গেছে, আসছে জাপান
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথটি ডাবল লাইন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে নেগোসিয়েশনও হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন থেকে সরে যায় দেশটি। সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে জাপান।
জানা গেছে, চীন সরে যাওয়ার পর জাপানের সরকারি সংস্থা জাইকাকে অর্থায়নের অনুরোধ করে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে সংস্থাটি বেশকিছু জরিপকাজও সম্পন্ন করেছে। প্রকল্পের আরও কিছু জরিপসহ বিভিন্ন যাচাই-বাছাই শেষে জাপান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ রুটে ট্রেনযাত্রার সময় কমে যাবে প্রায় ৩০ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর অধিকতর সুফল পেতে হলে এ রেলপথটি ডাবল লাইন করতে হবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের সময় কমবে এ রেলপথটি নির্মিত হলে। ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ১৬২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ বিদ্যমান আছে। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহন চাহিদা পূরণ এবং আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিত করতে এ রেলপথটি ডাবল লাইন করা জরুরি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের অধীনে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে। চীন সরকারের অর্থায়নে জি টু জি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা। এ জন্য ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নীতিগত অনুমোদন পায়। পরে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এরপর চীনের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব পাঠালে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিসিইসিসি) সঙ্গে কনট্রাক্ট নেগোসিয়েশন এবং বাণিজ্যিক চুক্তির প্রসঙ্গ আসে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেগোসিয়েশন শেষে প্রকল্পের লোন অ্যাপ্লিকেশন পাঠানো হয় ২০১৯ সালের ২১ মার্চ। চায়না দূতাবাস থেকে এটি পাঠানো হয় দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এরপর দুই বছরের বেশি সময় পর ২০২১ সালের ২৯ মার্চ একটি চিঠি দিয়ে এ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায় চীন।
চিঠিতে বলা হয়, এ রেলপথে ট্রেন চালানোর পর এর আয় দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না বাংলাদেশ সরকার। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবে সেটি দেখার বিষয় বাংলাদেশ সরকারের। আসল কথা হচ্ছে- পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নের পর আপাতত ঋণ দিতে আর রাজি হয়নি দেশটি। তা ছাড়া জিটুজি পদ্ধতিতে ঢাকা-সিলেট রেলপথটি নেগোসিয়েশন চূড়ান্তকরণের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও দর কমাতে বলা হয়। এতে ওই প্রকল্পটি ঝুলে যায়। প্রায় একই কারণে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথের অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় চীন।
এ প্রকল্পে চীন সরকারের অসম্মতির বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করলে তিনি বিকল্প অর্থায়নের উৎস সন্ধানের বিষয়ে সম্মত হন। এরপর ২০২১ সালেল ৪ নভেম্বর রেল মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চিঠি দেওয়া হয। ইআরডির অনুরোধে জাইকা সম্মত হয়েছে। তবে এ প্রকল্পের ব্যয় এবং যৌক্তিকতা নির্ধারণে বিভিন্ন ধাপে স্টাডি করছে সংস্থাটি। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৪ হাজার ২৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৮ হাজার ৭৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে বিলম্বজনিত কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডাবল লাইন করার প্রকল্পটি জরুরি। এটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে নির্মাণ হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর আরও সুফল আসবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটি ট্রেন থেমে আরেকটি অতিক্রম করে। পৃথক সেতু হলে সেই সমস্যা থাকবে না।
রেলসূত্র জানিয়েছে, বিদ্যমান রেলপথে প্রতিদিন ২৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। রেলপথটি ডাবল লাইন হলে ৭৪টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে মালামাল পরিবহনে ভার বহন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেটি দূর হবে ব্রডগেজ কনটেইনার ট্রেন চলতে। প্রকল্পের আওতায় ১৬২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন, ২৪.৯৯ কিলোমিটার লুপ ও সাইড লাইন নির্মাণ এবং ১১.২৮১ কিলোমিটার পথ পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৫৬ একর। বর্তমান অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব ১ কোটি এবং মূলধন ৪০৬ কোটি টাকা।