গ্যাস সংকটের উত্তরণ চায় বিকেএমইএ

লুৎফর রহমান কাকন
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
গ্যাস সংকটের উত্তরণ চায় বিকেএমইএ

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শিল্প খাতে গ্যাসের সংকট চলছে। তবে গত কয়েক মাসে এটি আরও প্রকট হয়েছে। এ কারণে শিল্প-কারখানাগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী চলতে পারছে না। ফলে কারখানার ব্যয় তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। অন্যদিকে কারখানা কম চলার কারণে রুজি কমে গেছে লাখ লাখ শ্রমিকের; অভাব-অনটনে ভূগছেন তারা। শুধু তাই নয়, এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে নিট শিল্প ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়ারস ম্যানুফ্যাকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।

জানা যায়, বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেটির অনুলিপি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকেও দেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, চিঠিতে বলা হয়েছে, অন্যতম রপ্তানি খাত নিট শিল্প ক্রান্তিলগ্ন পার করছে। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা পুরো শিল্প সেক্টরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে কাঁচামালগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় কারখানার পরিচালন ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সবেচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে গ্যাসপ্রবাহের স্বল্পতা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে গ্যাসের সংকট অনেক বেশি। নিট সেক্টরে গ্যাস সংকটের কারণে কারখানা চালু রাখা যাচ্ছে না।

চিঠিতে সংকট সমাধানে বলা হয়েছে, বিকেএমইএর ১৪৭টির মতো ডায়িং ফ্যাক্টরি আছে। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু গ্যাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ ছাড়া নিট ফ্যাক্টরিগুলোও গ্যাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু ১৬ অক্টোবর থেকে পুরো নারায়ণগঞ্জে কোনো গ্যাস ছিল না। এর ফলে শুধু ফতুল্লা, মদনপুর ও বিসিক শিল্পাঞ্চলে প্রায় চার শতাধিক রপ্তানিমুখী

প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এরই প্রেক্ষাপটে গত ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি সভায় বিকেএমইএর সভাপতি নারায়ণগঞ্জে গ্যাস না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে তিনি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে সমাধান করতে বললে ১০ নভেম্বর থেকে ৩-৪ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ বাড়ে। তবে পরদিন থেকে আবার গ্যাসের সংকট দেখা যায়। এ ছাড়া গত কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও ফ্যাক্টরিগুলোতে উৎপাদন কমে এসেছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এসব শিল্প-কারখানায় প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। পরোক্ষভাবে আরও ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গ্যাস সংকটে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা সীমিত হয়ে যায়। একটি মধ্যম মানের ফ্যাক্টরিতে গ্যাস না থাকার কারণে বর্তমানে প্রতিদিন তিন থেকে চার লাখ টাকার ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রথম সারির ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রতিদিন আরও সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার ডিজেল ব্যবহার করতে হয়। এত বিপুল পরিমাণ ডিজেল কিনে ফ্যাক্টরি পরিচালনা করা অসম্ভব। তাই রপ্তানির স্বার্থে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত শিল্প-কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

সেলিম ওসমান বলেন, শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। তাতে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে পুরো খাতে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক আমাদের সময়কে বলেন, গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ব্যবসায়ীরা বারবার সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলছেন। তবে গ্যাসের সমস্যা দ্রুত সমাধানের কোনো উপায় নেই।