সম্পদ বেড়েছে শাহরিয়ার ও আয়েনের, কোটিপতি বাদশা

জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী ব্যুরো
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
সম্পদ বেড়েছে শাহরিয়ার ও আয়েনের, কোটিপতি বাদশা

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ছয় কোটি ৭৮ লাখ টাকা; বর্তমানে আছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ পাঁচ বছরে তার নগদ অর্থ বেড়েছে অন্তত সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় দুই বিঘা জমির মালিক ছিলেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। বর্তমানে তার জমির পরিমাণ ৭৭ বিঘা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এই দুই সংসদ সদস্য হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণী দিয়েছেন, তাতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামা অনুযায়ী, শাহরিয়ার ও আয়েনের মতো রাজশাহীর বাকি চার সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যেরও সম্পদ কয়েক গুণ বেড়েছে।

হলফনামার তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকাই ছিল না। বর্তমানে তার ব্যাংকে রয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ আছে ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা; ২০১৮ সালে ছিল ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা। ২০১৪ সালে ছিল ৬২ হাজার ৪৫০ টাকা এবং ২০০৮ সালে ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৫০ টাকা।

২০১৮ সালে নিজের নামে ৭০ বিঘা জমি থাকলেও ‘নির্ভরশীলদের’ কোনো জমি ছিল না। তবে এবার তার নির্ভরশীলদের নামেও আছে ৬০ বিঘা জমি।

রাজশাহী-২ আসনে টানা তিন মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। গত পাঁচ বছরে ব্যাংকের টাকা বেড়ে পাঁচগুণ হয়েছে বামপন্থি এই রাজনীতিকের। ২০১৮ সালে বাদশা তার ব্যাংক হিসাবে

৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা দেখিয়েছিলেন। এবার দেখিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ২৪৫ টাকা।

পেশায় মাছ চাষী রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন। হলফনামায় দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ও ২০১৮ সালে তার নামে চার লাখ টাকা দামের দুই বিঘা জমি ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরে তিনি আরও ৭৫ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। তিনি এই জমির মূল্য দেখিয়েছেন ৩ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবার তিনি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকায় রাজধানীর পূর্বাচলে তিন কাঠার একটি প্লটও নিয়েছেন। ২০১৪ সালে স্ত্রীর নামে কোনো ফ্ল্যাট ছিল না। ২০১৮ সালে ৩০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট হয়। এবার স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছে প্রায় ৮৬ লাখ টাকার।

এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি আয়েন উদ্দিন; লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। জমি কেনা প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘২০১৮ সালেও জমি ছিল। পৈতৃক সম্পত্তি পরে ভাগ হয়েছে। এ কারণে নিজের জমি বেড়েছে। এ ছাড়া কৃষি পার্ক নির্মাণ করার জন্য বেশ কিছু জমি কিনেছি। আমার অবৈধ কোনো সম্পদ নেই। সব সম্পদের আয়কর রিটার্ন দেখানো আছে’।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন তিনি। হলফনামায় পেশা ব্যবসা উল্লেখ করলেও এ খাতে বার্ষিক কোনো আয় নেই তার। এবার হলফনামায় এনামুল দেখিয়েছেন, তার হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ছিল ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮ টাকা। স্ত্রীর ছিল এক কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৯ টাকা। এখন তার স্ত্রীর হাতে আছে ৩ লাখ টাকা। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ব্যাংকে টাকা বেড়েছে। ২০১৮ সালে এনামুলের ব্যাংকে ছিল ৭ লাখ ৮৭ হাজার ১১৪ টাকা, স্ত্রীর ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৩২৫ টাকা। এখন এনামুলের ব্যাংকে আছে ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬ টাকা; স্ত্রীর আছে ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তিনিও হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় গুণ। ২০১৮ সালে তিনি বার্ষিক আয় দেখান ১৪ লাখ ৯ হাজার টাকা। এবার দেখিয়েছেন ৯২ লাখ ৭০ হাজার।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম টানা তিন মেয়াদে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৮ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা। হাতে নগদ টাকাও বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ২০১৮ সালে নগদ ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা। এখন আছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৩ টাকা।