এক কিলোমিটারের জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা

এমরান আলী সজীব, নারায়ণগঞ্জ
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
এক কিলোমিটারের জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা

শেষ এক কিলোমিটার সড়কের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নিয়ে জটিলতায় শেষ করা যায়নি আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্প। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই স্থানের জমির যৌথ মালিকানা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। জমি বিনিময়ের একটি প্রস্তাব দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। জটিলতা নিরসন হলে প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সামসুজ্জোহা সড়ক নামে পরিচিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ২০২৩-এর জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তিন দফা সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি।

২০১৯ সালের ৮ জুলাই মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়। পরে প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। সেই সময়ে কাজ অসমাপ্ত থাকায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সড়কটির ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে নতুন করে ২০২৪-এর জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বলছে এর আগেই কাজ শেষ হবে।

৮ কিমি সড়কের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৭ কিমি সড়ক ইতোমধ্যে ৬ লেনে উন্নীত হয়েছে। চাদমারী অংশে কাজ শুরুর পর নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ করতে যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে যাত্রীদের। যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে শহরের ভেতরে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কাজের ধীরগতি, সড়ক সংকুচিত হওয়া এবং খানাখন্দ তৈরি হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা।

তবে প্রকল্পের কাজে ধীরগতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কাজে কোনো ধীরগতি নেই। প্রকল্পটির কাজ চলমান আছে। তা ছাড়া সড়কটি শুধু ৬ লেনে উন্নীত হচ্ছে না, এখানে আরও অনেক কাজও করতে হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহান ফেরদৌস আমাদের সময়কে জানান, সড়কটির দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটার। তার মধ্যে সাত কিলোমিটারের কাজ প্রায় শেষ। বাকি এক কিলোমিটারের মধ্যে জমি সংক্রান্ত জটিলতা আছে। গত আগস্টে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জমি বিনিময়ের একটি প্রস্তাব সেনাবাহিনীর কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্রমতে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের পর এটি প্রশস্ত হবে প্রায় ১৪২ ফুট। সড়কটি প্রশস্ত করার পর যোগাযোগ ব্যাবস্থা সহজতর করতে চারটি ইউটার্ন, তিনটি আন্ডারপাস, দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া নয়টি আরসিসি বক্স কালভার্ট সম্প্রসারণ, প্রায় সত দশমিক সত্তর কিমি সড়ক মজবুতিকরণ ও সার্ভিস সড়ক নির্মাণ, আট দশমিক একশ পাঁচ কিমি ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ ও সাত দশমিক সত্তর কিমি সড়ক প্রশস্তকরণ এবং হার্ড সোল্ডার নির্মাণ করা হলো প্রকল্পটির মূল কাজ।

নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া আঞ্চলিক সড়কের যানজট নিরসন এবং রাজধানীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের যোগাযোগ নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করা। এই প্রকল্পের আওতায় সড়কের ৩টি পয়েন্টে আন্ডারপাস ও দুটি পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ হবে। সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুটওভার ব্রিজ এবং শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইগড়ে আন্ডারপাস নির্মাণ হবে। যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।