খালি থাকবে আসন, তবুও হবে তীব্র প্রতিযোগিতা
চলতি বছর স্বনামধন্য পাবলিক, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, উচ্চশিক্ষায় আসন সংকট না থাকলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়বে। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কোচিং সেন্টারে ছুটছেন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা।
এ বছর নটর ডেম কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী শামীম আল আমিন আমাদের সময়কে বলেন, প্রথম পছন্দ মেডিক্যাল কলেজ অথবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। তার বন্ধু মোহাম্মদ সুজন জানান, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোয় ভালো লেখাপড়া হচ্ছে, তবে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভালো।
জিপিএ-৫ পাওয়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রোকেয়া তাবাসুমের পছন্দ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। তার সহপাঠী সুবর্ণা মনে করেন, সরকারি কলেজগুলোয় ভালো লেখাপড়া হয় না। ঢাকার সাত কলেজ এখন অনেক সমস্যায় জর্জরিত। তাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তার পছন্দের শীর্ষে।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাদমান জানান, বাবা-মায়ের ইচ্ছে বিদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। তার বাবা সামছুল আলম চৌধুরী বলেন, দেশে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময়ে রাজনৈতিক একটা প্রভাব থাকে, ফলে লেখাপড়া ব্যাহত হয়। তার চেয়ে বিদেশে লেখাপড়া করলে চাকরির জন্য আর ঘুরতে হয় না। তার ধারণা, এ জন্য সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যায় বিদেশে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করা লামিবার মা সুবর্ণা সাকলাদার জানান, প্রথম প্রছন্দ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। সে জন্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই একটি কোচিং সেন্টারে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, কোচিং না করিয়ে উপায় নেই। আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অ্যাডভোকেট অহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আছে, কিন্তু মানসম্পন্ন কতটি? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরজুড়ে মারামারি, হানাহানি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবার শিক্ষক আন্দোলনে ব্যাহত হয় লেখাপড়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঁড়িকাঁড়ি টাকাপয়সা ব্যয় হয় কিন্তু লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যালসহ হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। পাবলিক প্রতিষ্ঠানে চান্স না পেলে এরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে যাবে। সুতরাং, পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তির এ সংকট থাকবে, যেটা সর্বত্র আছে। ভর্তির আসন সংকট হবে না।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৫০০, ঢাবি সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, ৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭ হাজার ২০৬টি, টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ৫ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাবি ও রাবির অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৫০০ এবং চবি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে। সবমিলে খালি আসন আছে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬টি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
গত রবিবার প্রকাশিত ফলে সব শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ পাস করা শিক্ষার্থীদের শতভাগ যদি উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হন, তারপরও ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩৪টি আসন খালি থাকবে।