চট্টগ্রামে ১৬ আসনের পাঁচটিতেই নতুন মুখ

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম
২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
চট্টগ্রামে ১৬ আসনের পাঁচটিতেই নতুন মুখ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে নতুন মুখ আছেন পাঁচজন। বাকি ১১ আসনে পুরনোদের ওপরই ভরসা রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

গতকাল রবিবার বিকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৯৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের হাইকমান্ড একাধিক সংস্থার মাধ্যমে এবং নিজস্ব জরিপের ভিত্তিতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে। এসব আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২১৮ জন।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। বর্তমানে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে সনি এবার নৌকা প্রতীকে লড়বেন। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। ২০১৪ সালেও নজিবুল বশর নির্বাচিত হয়েছিলেন। জোটের শরিক হিসেবে এবারও তাকে আসনটি দেওয়া হবে এমন ধারণা করেছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু একই আসনে দলের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী প্রার্থী হওয়ায় হিসাব জটিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আসনটিতে জোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন এসএম আল মামুন। তিনি উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। সংসদ সদস্য পদে দলের মনোনয়ন পেতে গত ৩০ অক্টোবর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন তিনি। এসএম আল মামুনের বাবা এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার সীতাকুণ্ড আসন থেকে একাধিকার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সীতাকুণ্ড আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম গত দুই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র মনজুর আলম তার চাচা।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম। দুই দফায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার তিনি এই আসনে বিজয়ী হন। এর আগে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলে নতুন মোড় নেয়। ফলে আসনটি আবারও জোটের ভাগে যাচ্ছেÑ এমনটি ভাবা হয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকাও প্রার্থী দিল।

নৌকার প্রতীক পেয়ে এমএ সালাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে হাটহাজারী আসনে আওয়ামী লীগ এমপি পায়নি। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ করে দিয়েছেন, এ জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে। দলের প্রার্থী হতে তিনি গত সপ্তাহে চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। এবার তিনি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে নানা কারণে বিতর্কিত এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। গত শুক্রবার তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন পটিয়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ সাতজন নেতা।

এদিকে ১১টি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা হলেনÑ সন্দ্বীপে মাহফুজুর রহমান মিতা (চট্টগ্রাম-৩), রাউজানে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬), রাঙ্গুনিয়ায় ড. হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), বোয়াখালী-চান্দগাঁওয়ে নোমান আল মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৮), কোতোয়ালি-বাকলিয়ায় মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (চট্টগ্রাম-৯), ডবলমুরিং-হালিশহরে মহিউদ্দিন বাচ্চু (চট্টগ্রাম-১০), বন্দর-পতেঙ্গায় এমএ লতিফ (চট্টগ্রাম-১১), আনোয়ারায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (চট্টগ্রাম-১৩), চন্দনাইশে নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী (চট্টগ্রাম-১৫) ও বাঁশখালী আসনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬)।