পূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষায় কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার ১১টি শিক্ষাবোর্ডেই জিপিএ ৫ কমেছে, কমেছে পাসের হারও। শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য, এবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছে; পরীক্ষাও ছিল তুলনামূলক কঠিন এসব কারণে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কিছুটা কমেছে।
গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এবার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশে। এ ছাড়া গত বছর জিপিএ-৫ পান এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এবার পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন, অর্থাৎ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ৯১৭ জন কমেছে। গতকাল রবিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমানের ফলের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। এর আগে সকালে গণভবনে ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার সব শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে পাস করেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন। এবার পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা; পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এবার বোর্ডভিত্তিক ফলে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৩ জন। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন আট হাজার ১২২ জন। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭৫২ জন।
রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ; জিপিএ-৫ পেয়েছেন এগারো হাজার ২৫৮ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; ৫ হাজার ৬৫৫ জন পেয়েছেন জিপিএ-৫। চট্টগ্রামে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৯ জন। সিলেটে পাসের হার ৭৩ দশমিক ০৭ শতাংশ; এক হাজার ৬৯৯ জন পেয়েছেন জিপিএ-৫। ময়মনসিংহে পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ; জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৪৪।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দিনাজপুরে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ; জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৪৫৯ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৭০৯৭ জন পেয়েছেন জিপিএ-৫। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭৭ জন।
এবার দেশের ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি। তবে শতভাগ ফেল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গতবার এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ৫০টি।
এ বছর পাসের হার শতভাগ ৯৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩৩০টি। সে হিসেবে এবার শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ৩৭৭টি।
৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের গ্রুপভিত্তিক ফল অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অকৃতকার্য হয়েছে মানবিক বিভাগে। মানবিক বিভাগে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৭১ ছাত্রের মধ্যে পাস করেছেন এক লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৯ জন। পাসের হার ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ বিভাগে তিন লাখ ৬১ হাজার ৬৫৯ ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৪২০ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, আর ছাত্রীদের ৮৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ছাত্রদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ; ছাত্রীদের ৭৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
‘ফল বিপর্যয়ের’ কারণ জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গতবার পরীক্ষা সহজ ছিল। কম বিষয়, কম সময় ও কম নম্বরের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছে। এ জন্য পরীক্ষাটাও তুলনামূলক কঠিন হয়েছে। এতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কিছুটা কমেছে।’
যশোর বোর্ডে ফল প্রসঙ্গে যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, তাদের বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা একটু কঠিন হওয়ায় পাসের হার কম হয়েছে।
যেভাবে পুনঃনিরীক্ষণ
ফল পুনঃনিরীক্ষণ আজ সোমবার থেকে শুরু হবে; চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। টেলিটকের প্রি-পেইড মোবাইল নম্বর থেকে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখতে হবে। এরপর বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর, রোল নম্বর ও বিষয় কোড লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সেক্ষেত্রে কমা দিয়ে বিষয়/পত্রের কোডগুলো আলাদা করে লিখতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য আবেদন ফি লাগবে ১৫০ টাকা। দ্বিপত্র বিশিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে উভয়পত্রেই আবেদন করতে হবে। ম্যানুয়াল কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষাবোর্ড।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন