একের পর এক সাজা নাশকতার মামলা
ঢাকা ও ঢাকা মহানগর এলাকাধীন থানাগুলোতে দায়ের নাশকতার মামলাগুলোর মধ্যে গত এক বছরে ৩৩টি মামলায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের ৫৩৮ জন নেতাকর্মী দণ্ডিত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলার রায় হয়েছে গত ৩ মাসে। আদালত সূত্র বলেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার নিম্ন আদালতে আরও অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক নাশকতার মামলার রায় হতে পারে। আর তাতে দণ্ডিত হতে পারেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজারো নেতাকর্মী।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, নাশকতার মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্য হচ্ছে সাজাপ্রাপ্তরা যেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। সংবিধান অনুযায়ী কেউ কোনো মামলায় কমপক্ষে দুই বছরের ‘দণ্ডপ্রাপ্ত’ হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ‘অযোগ্য’ হন। বিষয়টি রেখে একের পর এক বিএনপি নেতাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন, অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে বেছে বেছে কারাদণ্ড দিচ্ছে। পুরনো মামলায় সাজা দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারোর সাজা হচ্ছে না।
নিম্ন আদালতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। তিনি বলেন, আগে নেতাকর্মীদের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩ থেকে ৬ মাস পরপর তারিখ পড়ত। এখন সেই একই মামলায় ৭ থেকে ১৫ দিন পরপর তারিখ পড়ছে। অথচ অন্য মামলায় ৩ থেকে ৬ মাস পরপর তারিখ পড়ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের নেতাকর্মীদের দণ্ডিত করে কারাগারে পাঠানোই সরকারের উদ্দেশ্য বলে তিনি মনে করেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু। তিনি বলেন, পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে; সেটা রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক হোক। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করছি। এখানে বিএনপি নেতাদের মামলাগুলো বেছে বেছে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে এ তথ্য সঠিক নয়।
দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. শাজাহান ও কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আহসান হাবিব লিংকন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর ও যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার উল্লেখযোগ্য।
রায় হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম রায় হয় গত বছরের ৩০ নভেম্বর হয়। পরে ২/৩ মাস পরপর একটি করে মামলায় রায় হতে দেখা যায়। তবে গত আগস্ট মাস থেকে প্রতি মাসে একাধিক মামলা রায় হতে
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
দেখা যায়। চলতি নভেম্বর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এক বা একাধিক মামলার রায় হচ্ছে।
ঢাকার আদালতগুলোর মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নাশকতা মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রায় ২শ মামলার বিচারকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যার অধিকাংশ মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলায় দলটির কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা রয়েছেন।
বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখা জানিয়েছে, বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে। যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ৫০ থানায় হয় ১৭ হাজার ৫৮৩টি মামলা। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর ২৫ জুলাই পর্যন্ত এসব মামলা হয়েছে।
৫৩৮ নেতাকর্মীর সাজা
আট বছর আগে গুলশান এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর যুবদলের (উত্তর) আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিনসহ (জুয়েল) তিনজন বিএনপি নেতাকে কারাদণ্ড দেন আদালত।
চলতি বছর ১০ জানুয়ারি ২০১৩ সালের নাশকতার অভিযোগের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলায় ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালত বিএনপির ১০ কর্মীর ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এরপর চলতি বছর ৮ মার্চ নয় বছর আগের নাশকতার মামলায় বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর মোল্লাসহ চারজনের দুই বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক।
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ৯ বছর আগে রাজধানীর মুগদা থানার নাশকতার মামলায় বিএনপির সাত কর্মীর দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
১০ বছর আগে সবুজবাগে ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার মামলায় গত ১৯ জুন বিএনপি নেতা সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুর রহমানসহ সাতজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
২০১৩ সালে কোতোয়ালি থানা এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় গত ৭ আগস্ট যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ২১ জনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
চলতি বছর ৯ অক্টোবর রাজধানীর ভাটারা থানার নাশকতার একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. শাজাহান ও কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আহসান হাবিব লিংকনসহ ১৫ জনকে চার বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।
গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর বংশাল থানার নাশকতার অভিযোগের একটি মামলায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক আলী সরকার, তার ভাই ইয়াকুব সরকারসহ দলের ৪৮ নেতাকর্মীকে খালাস দিয়ে মোহন মোল্লা নামে এক আসামির তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
এরপর গত ৩০ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান ও বাড্ডা থানার নাশকতার পৃথক দুই মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রবিউল আলম ওরফে রবি ও বাড্ডা থানা যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর মোল্লাসহ ২১ জনকে দণ্ডিত করেন আদালত।
যার মধ্যে রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় ১০ বছর আগের নাশকতার একটি মামলায় রবিউল আলম ওরফে রবিসহ ১০ জনের আড়াই বছর করে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।