মূলধন ও আস্থা হারিয়ে ধুঁকছে শেয়ারবাজার
দেশের শেয়ারবাজার রীতিমতো ধুঁকছে। লেনদেন একেবারে তলানিতে। সূচক কমছে, শেয়ারের মূল্যও কমছে। এ ছাড়া ফ্লোরপ্রাইসের কারণে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে বিনিয়োগকারী, স্টক ব্রোকার ও ডিলারসহ সব পক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের সব ক্ষেত্রেই মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশাসনের অভাব ও অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতির কারণেই আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। মানুষের আস্থা কম হওয়ার কারণেই বাজার মূলধন খুব কম। আবার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যাও কম। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন কমছে।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। আর তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
ডিএসইর এক সাবেক পরিচালক আমাদের সময়কে বলেন, পুঁজিবাজারের যেসব বিনিয়োগকারী আছেন, তারা প্রতিনিয়ত বাজারের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। আলোচনা অনেক হয়, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা হাতে কিছু পান না। এমন সময় দেশের আর্থিক অবস্থার এই দৈন্যদশা, যখন বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা সরকারকে সুপারিশ করছেন, আর্থিক খাতকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, যেন আর্থিক খাত দেশের উন্নয়ন যাত্রায় সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারে। তাদের মতে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ক্রেতার পরিমাণ কম। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারবাজারে আগ্রহ আরও কমেছে। ফলে মধ্যস্থতাকারী ও বিনিয়োগকারী উভয়ই শেয়ারবাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারেও দেখা দেয় মন্দা প্রবণতা। রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কায় শেয়ারবাজারে যে দরপতন শুরু হয়, তার ধারা অব্যাহত ছিল গত সপ্তাহজুড়েই। ফলে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার পাশপাশি কমেছে সব কয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় তিনগুণের। সপ্তাহজুড়ে বাজারটিতে ৪৩টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির। আর ২১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ সময় ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল ৯ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ১২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা কমেছে।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৮ পয়েন্ট কমেছে। প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ১২ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৮ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৬ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ।
ডিএসইর সব কটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪০০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৩৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চলছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম