করোনার মতো গুরুত্ব না দেওয়ায় ডেঙ্গু এত ভয়াবহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
করোনার মতো গুরুত্ব না দেওয়ায় ডেঙ্গু এত ভয়াবহ

করোনার মতো দেশব্যাপী প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত শহরকেন্দ্রিক বিস্তার ঘটলেও এরপর থেকে বিশেষ করে চলতি বছর অতীতের সব সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে ডেঙ্গু। গত প্রায় ১১ মাসে তিন লক্ষাধিক আক্রান্ত ও প্রায় ১৬শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে ডেঙ্গুতে। তবে করোনার ব্যাপকতা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর যতটা তৎপরতা দেখা গিয়েছিল ডেঙ্গুতে তার আংশিকও নেই বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞরা।

রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, সরকার যেমন শুরুতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি, তেমনি মানুষের মধ্যেও সচেতনতা পরিলক্ষিত হয়নি। যে কারণে আগের বছরের মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সংক্রমণ, যা আগামী বছর চরম সংকটাপন্ন পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। গতকাল রাজধানীর নিপসমে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, এ বছর আক্রান্তদের ৫১.৫% শতাংশ ডেন-২ এবং ৪৩.৯% ডেন-৩ ধরনে আক্রান্ত। মোট রোগীর ৮৬% বাসা হাসপাতালের দুই কিলোমিটারের মধ্যে। আক্রান্তদের চিকিৎসা নিতে গিয়ে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে গড়ে ২৮ হাজার টাকার বেশি, যার ৫৬% দিতে হয়েছে ব্যক্তির পকেট থেকে। আর বেসরকারিতে চিকিৎসা পেতে গড় ব্যয় ৪৭ হাজার টাকার বেশি। মে-জুলাই এডিসের প্রজনন হার অনেকটাই বেশি। তাই এ সময়ের আগেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা করতে হবে। কিন্তু সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাকাল থেকে আমরা জনসম্পৃক্ততার বিষয়ে চেষ্টা করেছি, তবে ব্যর্থ হয়েছি। ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করেছি। কিন্তু এভাবে মিটিং করলে কী হবে? আজ পর্যন্ত জানি না, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোনো টাস্কফোর্স কমিটি হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে পূর্বেই একটা জাতীয় কর্মকৌশল করা হয়েছিল। সেটা রিভিশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের এক্সপার্ট অফার করেছি, সেটাও হয়নি। সবাই বিচ্ছিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও প্রতিরোধে কোনো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম দেখিনি। দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। এ জন্য একটা জরুরি সভাও ডাকা হয়নি। এ বিষয়গুলো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে দিয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) ডা. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের যথেষ্ট গ্যাপ রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে আমরা আলোচনার টেবিলেই আটকে আছি। কিন্তু আমাদের মাঠপর্যায়ে যেতে হবে। এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হিউম্যান রিসোর্স। যে হারে রোগী বেড়েছে, সেই অনুপাতে হাসপাতালগুলোতে জনবল নেই, রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৫৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে মারা গেছেন ১২ জন। এ নিয়ে এ বছর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৫৯৫ জনে ঠেকেছে।