ভেবেছিলাম এটাই হয়তো ‘দি এন্ড’
তাৎক্ষণিক অনুভূতি
“হঠাৎ কেঁপে উঠল বিল্ডিং, আসবাবসহ সবকিছু। বুঝতে দেরি হলো না- ভূমিকম্প হচ্ছে; কিন্তু আগের মতোন না। মুুহূর্তেই আরও জোরে কাঁপতে শুরু করল। শোকেসের কাচ, কাচের জিনিসপত্রের আওয়াজ হচ্ছে। কোলের দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে ওই মুহূর্তে ভেবেছিলাম- এটাই হয়তো ‘দি এন্ড’। এখনই হয়তো সবকিছু ভেঙে পড়বে।”
গতকাল ভূমিকম্পের পর এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন রাজধানীর বৌদ্ধমন্দির এলাকার বাসিন্দা আফরোজা নীরা। ভূমিকম্পের ঘণ্টাখানেক পরও আতঙ্ক কাটেনি তার। কথা হলে তিনি বলেন, “জীবনে কখনও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি। দুই ছোট বাচ্চা নিয়ে বাসায় একা ছিলাম। ওদের বাবা তখন অফিসে। কোথায় যাব, কি করব বুঝে উঠতে পারিনি। মনে হচ্ছিল আমরা বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পড়তে যাচ্ছি। এখনও ভয়ে কাঁপছি।”
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে এভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সবাই। গত কয়েক দশকের মধ্যে এমন ভয়ানক ভূমিকম্প দেশের মানুষ আর দেখেনি। রিখাটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে। ২৬ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়ায় সবার মাঝে। বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে মানুষজন। মোবাইল ফোনে একে ওপরের খোজখবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এমন ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার পর দিনভর আতঙ্ক কাটেনি সাধারণ মানুষের।
দিনব্যাপী সবার মুখে মুখে আলোচনার বিষয় ছিল ভূমিকম্প। বাসাবাড়ি থেকে পথচারী, অফিস থেকে চায়ের দোকানÑ সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিষয়টি। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে অনেকেই তাদের আতঙ্ক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভূমিকম্পের ভয়াবহতা, ঝুঁকি, মোকাবিলার সক্ষমতা এবং রাজধানীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নানা মত দিচ্ছেন সবাই।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মো. কৌশিক আহমেদ বলেন, “ভূমিকম্পের পর খবরে দেখছি বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে পড়েছে। ফাটল ধরেছে। কি ভয়ানক অবস্থা। আর কিছু মুহূর্ত কম্পন হলে হয়তো সবকিছু শেষ হয়ে যেত।”
বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম ভূমিকম্প, এতটা তীব্র কম্পন জীবনেও দেখিনি। সন্তানকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের নিচে ছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল এখনই ভবন ধসে পড়বে। আর আমরা নিচে চাপা পড়ে যাব।’
মাতুয়াইল তুষারধারা এলাকার বাসিন্দা মো. জিহাদুল হক বলেন, ‘আমি তখন বিছানায় ঘুমে ছিলাম। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভূত হলে এক লাফে উঠে বুঝলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু ঝাঁকুনিটা তীব্র হচ্ছে। ভাবলাম এটা কোনো সাধারণ ভূমিকম্প নয়। বুঝতে পারছিলাম না কি পরিণতি অপেক্ষা করছে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এদিকে সকাল থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভূমিকম্প ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নানা পোস্ট এবং বিভিন্ন কনটেন্ট। অনেকেই ব্যক্ত করছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা। কেউ কেউ ভূমিকম্প মোকাবিলা করার সক্ষমতা, ভবন নির্মাণে নানা অনিয়ম এবং তাৎক্ষণিক করণীয় ়ে অজ্ঞতা বিষয় তুলে ধরেছেন তাদের বক্তব্যে।