দেশের ইতিহাসে শক্তিশালী যত ভূমিকম্প

অনলাইন ডেস্ক
২১ নভেম্বর ২০২৫, ২০:২৪
শেয়ার :
 দেশের ইতিহাসে শক্তিশালী যত ভূমিকম্প

ছুটির দিন শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সারাদেশ। এতে এখন পর্যন্ত ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্নস্থানে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। ঘটেছে ভবনধসের একাধিক ঘটনা।

এ দিন সকালে ১০টা ৩৮ মিনিটে ২৬ সেকেন্ডের এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে। এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে দেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবির।

ভারতীয় ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ এবং বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যে কোনো মুহূর্তে দেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। এ ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে রাজধানীসহ পুরো ঢাকা বিভাগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ।

দেশের ইতিহাসের শক্তিশালী কয়েকটি ভূমিকম্পে চোখ রাখা যাক- 

মহেশখালী, ১৯৯৯ সাল

বিংশ শতকে বাংলাদেশের শেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পটি হয় মহেশখালী দ্বীপে। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের সেই ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল এই দ্বীপেই। ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দ্বীপের অনেক বাড়িঘর। ভূমিকম্পের এ ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়।

চট্টগ্রাম, ১৯৯৭ সাল

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এই ভূমিকম্পের প্রভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল দেখা দেয়। একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ে। এ ভূমিকম্পে ২৩ জনের মৃত্যু হয়।

সিলেট, ১৯৫০ সাল

১৯৫০ সালে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে ৮.৫ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এতে ভারতে চার হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলও এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠেছিল। তবে উৎপত্তিস্থল থেকে দূরত্ব থাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

শ্রীমঙ্গল, ১৯১৮ সাল

১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এই কম্পন মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও অনুভূত হয়। এতে শ্রীমঙ্গল ও ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তবে নিহতদের সঠিক সংখ্যার তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শিলং-সিলেট, ১৮৯৭ সাল

১৮৯৭ সালের ১২ জুন শিলং প্ল্যাটোতে ৮.২ মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক নামে পরিচিত। এর ঝাঁকুনি দিল্লি থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত অনুভূত হয়। সেই ভূমিকম্পে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, সিলেটেই প্রাণহানির সংখ্যা ছিল পাঁচ শতাধিক। সিলেটের বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়, ময়মনসিংহ এবং দেশের উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। সুরমা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথে এ ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে।

মানিকগঞ্জ, ১৮৮৫ সাল

১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই মধুপুর ফল্টে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, যা বেঙ্গল ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এর উৎপত্তিস্থল ছিলো মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া। ধারণা করা হয় এর মাত্রা ছিলো ৬.৫ থেকে ৭.০। এটি এতোটাই প্রবল ছিলো যে ভারতের সিকিম, বিহার, মনিপুর এবং মিয়ানমার পর্যন্ত এর কম্পন অনুভূত হয়। এতে অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

জৈন্তাপাহাড়, ১৮৬৯ সাল

১৮৬৯ সাল সিলেটের জৈন্তা পাহাড়ের উত্তরাংশের শিলচড়ে একটি বড় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার এ ভূমিকম্প ‘কাচার আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিতি পায়। এতে জৈন্তাপাহাড়ের পার্শ্ববর্তী শিলচড়, নওগাং ও ইম্ফল এলাকায় বহু স্থাপনা ধসে পড়ে এবং বহু মানুষ মারা যায়। তবে প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

টেকনাফ, ১৭৬২ সাল

১৭৬২ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল টেকনাফ। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফল্ট লাইনে ৮.৫ মাত্রারও বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এর ফলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উঁচুতে উঠে আসে, যা আগে ছিলো ডুবে থাকা দ্বীপ। মিয়ানমারের একটি দ্বীপ এই কম্পনে ছয় মিটার উপরে উঠে যায়। একই ভূমিকম্পে সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে কঠিন শিলা ভেদ করে নিচ থেকে কাদা ও বালুর উদগীরণ ঘটে। এই ভূমিকম্পের কারণে বঙ্গোপসাগরে সুনামি হয় এবং সুনামির ঢেউয়ে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বাড়িঘর ভেসে গিয়ে প্রায় ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এই ভূমিকম্পেই বদলে যায় ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ।

আসাম, ১৫৪৮ সাল

অবিভক্ত ভারতীয় অঞ্চলে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পটি হয়েছিল আসামে। এতে হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সুবিশাল ভূখণ্ড কেঁপে ওঠে। মারা যায় অসংখ্য মানুষ। ওই ভূমিকম্প এই অঞ্চলের ভূ-গঠনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল, যদিও কী ধরনের পরিবর্তন তা বিস্তারিত জানা যায় না।