আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস

সাজ্জাদ মাহমুদ খান
২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৬
শেয়ার :
আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস

সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ শুক্রবার। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি সংকটকালে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছে দেশের সশস্ত্র বাহিনী। বিশেষ করে গত বছর দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে জননিরাপত্তায় আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সফল অভিযান পরিচালনা করে আসছেন তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বড় অংশীদার হয়ে বিশ্ব শান্তিরও প্রতীক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আজ উদযাপতি হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা ২১ নভেম্বর সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা ও দেশপ্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে অংশ নেন। হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সারা পৃথিবীতে আমরা শান্তি স্থাপন করছি। দেশের অবস্থা বিবেচনা করে ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার (বেসামরিক প্রশাসনকে সামরিক সহায়তা) আওতায় তারা কাজ করছে। পুলিশ নিষ্কিয় থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল। ফলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে যে কাজ করছে, এটা আসলে তার মূল কাজ না। শুধু এসব কর্মকাণ্ড দিয়ে সেনাবাহিনীকে বিবেচনা করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে স্বশস্ত্র বাহিনীর মূল প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। এতে তাদের ক্ষিপ্রতা কমে যেতে পারে। এখন সেনাবাহিনী যত দ্রুত সম্ভব ফিরে যাবে, ততই বাহিনীর জন্য মঙ্গল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী যখন জাতির ক্রান্তিকালে মানুষের ভরসাস্থল হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে, তখন সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে নানা গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৫ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে সেনা সদর দপ্তরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান জানিয়েছেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ।

কর্মসূচি : আইএসপিআর জানিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার দেশের সব সেনানিবাস, নৌ-ঘাঁটি এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটির মসজিদগুলোতে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এ দিন সকালে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার জন্য নির্ধারিত নিজস্ব কার্যালয়ে তিন বাহিনী প্রধানগণের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন। পরে বাহিনী প্রধানগণ বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ১০১ জন নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের মাঝে শুভেচ্ছা স্মারক বিতরণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, দিবসটি উদযাপনে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার বিকাল ৪টায় ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।