হামজার বার্তা পেলেন মুশফিক
নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে রঙিন পারফরম্যান্স মুশফিকুর রহিমের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনেই সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েছেন তিনি। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়া থেকে মাত্র ১ রান দূরে ছিলেন অভিজ্ঞ এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। গতকাল দ্বিতীয় দিনে মুশফিক সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছেন। শততম টেস্ট বলেই তার সেঞ্চুরি নিয়ে আলোচনাটা বেশি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন, সে ম্যাচ আবার রাঙিয়ে দিলেন শতকে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শততম টেস্টে এটি ১২তম সেঞ্চুরির কীর্তি, যে সেঞ্চুরি দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ১৩টি সেঞ্চুরির রেকর্ডে মুশফিক ছুঁয়ে ফেলেছেন সতীর্থ মুমিনুল হককে। শততম টেস্টে নিজের শতক নিয়ে গতকাল মুশফিক বলেন, ‘প্রতিটি ম্যাচেই আমার চেষ্টা থাকে নিজের সেরাটা দেওয়ার, দলের জয়ে যতটা সম্ভব বড় ভূমিকা রাখার। গতকালও (প্রথম দিন) বলেছি ক্যারিয়ার ১০০ ম্যাচ হোক বা যে কারও যে কোনো মাইলফলক, সবকিছুর আগে থাকে দলের প্রয়োজন। আমি শুধু সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি।’ তবে প্রথম দিনে ৯৯ রানে অপরাজিত থাকাটা তার ক্যারিয়ারে নতুন অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদিন ব্যাট করেছি, ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলাম, এটা আমার ২০ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও হয়নি। এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে ২০ বছর পরও আপনি নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারেন।’
২০০৫ সালে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছে মুশফিকের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন; এবার শততম ম্যাচ খেলছেন মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০ বছরের পথচলায় ১৮৩ ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ৪৫৭ রান করেছেন। তার শতক ১৩টি, ফিফটি ২৭টি। শততম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামার আগে অনুভূতি কেমন ছিল তা জানাতে গিয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি টিম হাডলেও (মাঠে ঢোকার আগের রিচুয়াল) একটা কথা বলেছি, ১০০ টেস্ট খেলছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে প্রথম ম্যাচ খেলছি। একই রকম রোমাঞ্চ ছিল। প্রতিটা টেস্ট ম্যাচই আমার কাছে বিশেষ, প্রতিটা ম্যাচ যখন খেলতে যাই, আমি সেই প্রথমবারের মতোই প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করি। নিজের সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারি।’ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের দীর্ঘ এই পথচলায় নিজেকে ‘বোরিং পারসন’ বলে মন্তব্য করেছেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা যদি বলি, আমি একজন বোরিং পারসন। প্রতিদিন অনুশীলনে আমি একই কাজ বারবার করে যাই। ২০ বছর ধরে করছি, নাকি পরে আরও ৪০ বছর বেঁচে থেকে তা করব, এটা কোনো ব্যাপার নয়। যদি নিজের ও দলের জন্য তা দরকারের হয়, আমি এটা করে যেতে পারব। পেশাদারির জায়গায় কোনো ছাড় নেই। আমি শূন্য করলাম নাকি ১০০, এটা আমার সাফল্য নয়; কারণ এটা আমার হাতে নেই। চেষ্টা, প্রসেস, সততাটা আমার হাতে আছে। আমার জীবনে এটাই একমাত্র মটো। এটা শুধু ক্রিকেটে না, আমার জীবনের সবকিছুতেই।’ বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুশফিকের অবদান সবারই জানা। তিনি এমনি এমনি মিস্টার ডিপেন্ডেবল হননি। পঞ্চপাণ্ডবের একজন মুশফিক। কঠোর অনুশীলন আর ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত থেকেই তিনি তার ক্যারিয়ারকে এতদূর টানতে পেরেছেন। তার এ চলার পথে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করার জন্য স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মুশফিক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ত্যাগ আমার স্ত্রী করেছে। কারণ আপনারাও হয়তো জানেন বা দেখেন যে আমি একটু অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। কিন্তু এটা কখনও সম্ভব না, যদি আমার ঘরে এ রকম একটা পরিবেশ না থাকত।’ মুশফিক আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন তার কাছে সবার আগে দেশ, বাংলাদেশ দল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমি মুশফিকুর রহিম, সমুদ্রের দুই-একটা ফোঁটার মতোই। নাম বড় কিনা, সেটা আসলে আলাদা বিষয়। দেশের কথাটাই আগে, দলের কথাটাই আগে। আমরা দেশের জন্য খেলিÑ এই বার্তাটাই দিতে চেয়েছি।’ মুশফিক (১০৬) ছাড়াও এদিন সেঞ্চুরি করেছেন লিটন দাস (১২৮)। দুই সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৭৬ রান করেছে। এরপর বোলারদের কল্যাণে আয়ারল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছে। দ্বিতীয় দিনশেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ৩৮ ওভারে ৯৮/৫। ৩৭৮ রানে পিছিয়ে আইরিশরা। মুশফিক জানান, নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলে সেটিই হবে তার সবচেয়ে বড় পাওয়া। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচে জয়ই হবে আমার সবচেয়ে বড় উপহার। আমি রান করি কিনা, সেটা খুব বড় বিষয় নয়। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে যে কিছু অবদান রাখতে পেরেছি। আর অবশ্যই চাই, যেন এই ম্যাচটা জিতি এবং সবাই মিলে উপভোগ করতে পারি।’
আরও পড়ুন:
স্পিনে ভরসা রাচিনের
এদিকে শততম টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাওয়া মুশফিককে ভিডিওবার্তায় অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের তারকা ফুটবলার হামজা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম মুশফিক ভাই, আমাদের দেশের বড় একজন কিংবদন্তি আপনি। আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আপনার ১০০তম টেস্টের জন্য অভিনন্দন। ইনশাল্লাহ আগামীকাল সেরাটা হবে।’ হামজার এমন ভিডিও বার্তায় আপ্লুত মুশফিক। তিনি জানালেন, কখনও দেখা হলে তাকে ধন্যবাদ জানাবেন। মুশফিক বলেন, ‘আমি আজ সকালে শুনেছি। পরে আমি আমার ম্যানেজারের মোবাইল থেকে দেখেছি। তো আমি সত্যিই অবাক হয়েছি এবং এটা দেখে খুশি হয়েছি। আশা করছি যদি সামনাসামনি দেখা হয় কখনও, ইনশাল্লাহ অবশ্যই হবে, আমি তখন ধন্যবাদ জানাব।’
আরও পড়ুন:
সূর্যর সাফল্যের মন্ত্র