এক বছরে ৮ খুন করে এখনও অধরা রায়হান

রায়হান উদ্দিন, চট্টগ্রাম
২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩
শেয়ার :
এক বছরে ৮ খুন করে এখনও অধরা রায়হান

চট্টগ্রামে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত মো. রায়হান আলম। গত এক বছরে আটজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ থাকার পরও সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। পুলিশের দাবি, অপরাধ সংঘটনের পর দ্রুত গা-ঢাকা দেওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

রাউজানের ৭ নম্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত বদিউল আলমের ছেলে রায়হান। বর্তমানে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী। এরা বিদেশে পলাতক আরেক ‘সন্ত্রাসী’ শিবির সাজ্জাদ ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী হয়ে কাজ করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বড় সাজ্জাদ দেশের বাইরে থেকে ছোট সাজ্জাদকে দিয়ে চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। তার বাহিনীতে রয়েছে ২৫ জন সক্রিয় সদস্য। গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিংমল থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বাহিনীর হাল ধরে পাঁচ সহযোগী। তাদের অন্যতম ছোট সাজ্জাদের ডানহাত হিসেবে পরিচিত রায়হান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিত রায়হান। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিএনপির সভা-সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করে।

অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্টের পর আটটি খুনের সঙ্গে জড়িত রায়হান। এর মধ্যে রাউজানের যুবদল কর্মী মো. আলমগীর, মো. সেলিম, মোহাম্মদ ইব্রাহিম বখতিয়ার হোসেন ওরফে মানিক, আব্দুল্লাহ আল রিফাত হত্যায় রায়হানের নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া নগরীতে ‘ঢাকাইয়া আকবর’ নামে আরও এক সন্ত্রাসীকে হত্যার সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সর্বশেষ ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে ঢুকে সরওয়ার হোসেন বাবলা নামে এক সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এরশাদ উল্লাহসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রায়হানের অবস্থান রাউজানের পাহাড়ি এলাকায়। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত পাহাড়ে পালিয়ে গিয়ে সে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। ফলে একাধিক অভিযানেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ বলেন, রায়হান দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাকে ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

ফেসবুকে একের পর এক হুমকি : ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি ‘রায়হান আলম’ ব্যবহার করে ৫ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেয় রায়হান। গত ১৩ নভেম্বর আজিজ নামের এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে সে লিখেÑ ‘তোর মৃত্যু হবে সব চাইতে ভয়ঙ্কর। কুকুরে তোর নাড়িভুড়ি টেনে টেনে খাবে।’ আরেক পোস্টে দাবি করা হয়, তাকে হত্যার জন্য ২০ লাখ টাকা বাজেট করা হয়েছে। পাল্টা তিনি লেখেন- ‘আমি ৩০ লাখ দেব, আজিজকে জীবিত দিতে হবে।’

রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলামকে হুমকি দিয়ে রায়হান একটি পোস্টে লিখে- ‘মামলা বাণিজ্য বন্ধ করুন। না হয় রাউজানের পরিস্থিতি আপনার কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাবে।’

এ বিষয়ে ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাকেও সরাসরি হুমকি দিয়েছে। আরও অনেককেই হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ব্যবসায়ীকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি : গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ একরামকে ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী একরাম জানান, ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’Ñ এমন বার্তা তাঁকে পাঠানো হয়। তাঁর দাবি, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে চিনে পুলিশে সোপর্দ করার পর থেকেই সাজ্জাদ পক্ষের লোকজন তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় রায়হানও তাঁকে টার্গেট করে।