শ্রীমঙ্গলে নিজ বাড়িতে ফুটবলার শমিত
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বাংলাদেশি–কানাডিয়ান ফুটবল তারকা শমিত সোম বুধবার একদিনের জন্য নিজ জেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এসেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই উজ্জ্বল নক্ষত্র নিজ পৈতৃক বাড়িতে ফিরতেই উৎসবে ফেটে পড়ে পুরো এলাকা। সকাল থেকেই গ্রামবাসীর মুখে দেখা যায় আনন্দের ঝলক, গর্বের আলো।
সকালে ঢাকার ফ্লাইটে সিলেট পৌঁছান শমিত সোম। সেখান থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দেওয়া গাড়িতে করে তিনি শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণ উত্তরসুর গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাড়ির সামনে ভিড় জমতে থাকে গ্রামের মানুষ, শুভানুধ্যায়ী, শিশু-কিশোর ও ভক্তদের।
তিনি গাড়ি থেকে নামতেই মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে বরণ করে নেন। ঘরবাড়ি সাজানো, ব্যানার টাঙানো, আনন্দধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বাড়িটি। ভারতের বিপক্ষে জয়ের মালা গলায় ঝুলিয়ে বাড়িতে ফেরা যেন আনন্দকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
স্বল্প বিশ্রাম নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শমিত সোম। তিনি বলেন, ‘এই জয় শুধু টিম নয়, দেশের মানুষের জন্য। তাদের আনন্দই আমার শক্তি।’
শমিত সোমের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার। তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন লাল সোম বলেন, ‘শমিত আমাদের পরিবারের গর্ব। দেশের জন্য খেলছে। এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।’
তার ফুফু শান্তা বিশ্বাস বলেন, ‘শৈশব থেকেই শমিতের প্রতিভা ছিল। আজ দেশের জার্সিতে তাকে দেখে আমরা অভিভূত।” কাকি গোপা সোম বলেন, “বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে শমিত। আমরা তার সাফল্যের জন্য দোয়া করি।’
এলাকাবাসী বলেন, ‘শমিত আমাদের শ্রীমঙ্গলের গর্ব। তার এক নজর দেখতে আমরা সকাল থেকে অপেক্ষা করেছি। বাংলাদেশ দলে এমন আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার যোগ হওয়া আমাদের সৌভাগ্য।’শমিত সোম শুধু বাংলাদেশের জাতীয় দলের নতুন মুখ নন, তিনি একজন আন্তর্জাতিক মানের মিডফিল্ডার। কানাডার এডমন্টনে জন্ম নেওয়া এই ২৭ বছর বয়সী ফুটবলার ৬ বছর বয়স থেকেই ফুটবলে যুক্ত। পরিবার ১৯৮৯ সালে কানাডায় পাড়ি জমায়। ফুটবলার শমিত ভিক্টোরিয়া বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মানিক লাল সোমের নাতি। বাবা-মা মানস সোম ও নন্দিতা সোম। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন লাল সোম ও প্রানতোষ সোমের ভাতিজা। এই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাই তাকে বাংলাদেশের ফুটবলে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার পর এটি তার প্রথম গ্রামের বাড়িতে আসা। তার আগমনে কয়েকদিন ধরেই গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। শ্রীমঙ্গলের মানুষ এখন তাকে দেশের ফুটবলের নতুন ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখছেন।
একদিনের এই সফর শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে শমিত সোমের ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। তবে তার এ সংক্ষিপ্ত আগমনও আনন্দ ও গর্বে ভরিয়ে দিয়েছে শ্রীমঙ্গলের মানুষকে।