১০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় নিয়োগ বাতিল

বগুড়ায় ডিসিসহ সাতজনের নামে মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৬
শেয়ার :
১০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় নিয়োগ বাতিল

বগুড়ার একটি মাদ্রাসায় ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরও ১০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় এক বেকার যুবককে চাকরি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা করেছেন চাকরিবঞ্চিত সেই যুবক। মামলার পর আদালত কৈফিয়ত তলব করলেও কোনো জবাব না দেওয়ায় নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বগুড়া সদর উপজেরার নামুজা ইউনিয়নের নামুজা এসএসআই ফাজিল মাদ্রাসায় এই নিয়োগ বঞ্চনার ঘটনাটি ঘটে। মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। মামলায় বগুড়ার বিদায়ী জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা, অধ্যক্ষ রুস্তম আলী ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম শাহাদত হোসাইন। তিনি বগুড়া শহরের মাটিডালী এলাকার বাসিন্দা।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, ঘুষের দাবি পূরণ না করায় চাকরি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর বগুড়ার প্রধম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শাহাদত হোসাইন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে বাদী মাদ্রাসাটির ল্যাব সহকারী পদে চাকরির আবেদন করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ৩৪ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং তাকে নিয়োগ কমিটি স্বাক্ষরিত ফলাফল বিবরণী সরবরাহ করা হয়।

এর পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রুস্তম আলী মোবাইল ফোনে বাদীকে মাটিডালী মোড়ে একটি হোটেলে ডেকে নেন। সেখানে ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার আগে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাদী টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় পত্রিকায় আবারও ওই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ৬ অক্টোবর বিকালে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার সঙ্গে দেখা করে ঘুষ দাবির বিষয়টি জানান। কিন্তু হোসনা আফরোজা তাকে কোনো আশ্বাস না দিয়ে উল্টো দুর্ব্যবহার করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন। পরে শাহাদত হোসেন ঘুষ দাবির বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়ে এর প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (রিসিভ কপি) নেন। পরে তার নিয়োগ বাতিল করে আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন মাদ্রাসা কমিটি। এ অবস্থায় ৯ অক্টোবর বাদী শাহাদত হোসাইন বগুড়া আদালতে মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী বলেন, ঘুষ দাবির বিষয়টি সঠিক নয়। এমনকি ওই চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে আমার দেখা পর্যন্ত হয়নি। তিনি বলেন, আগামী তারিখে আদালতে জবাব দাখিল করব।

বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, নামুজা এসএসআই ফাজিল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীর কাছে ঘুষ দাবির অভিযোগটি পেয়ছি। নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করেছেন। তার সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, আদালত বিবাদীদের সাত দিনের সময় দিয়ে কৈফিয়ত তলব করেছিলেন। কিন্তু বিবাদীগণ কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দিয়েছেন। আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে।

জানা গেছে, গত শনিবার বগুড়ার বিদায়ী জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বদলিজনিত কারণে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বগুড়া জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লীডার (জিপি) শফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, মামলা বিষয়টি জানা আছে। ডিসির ব্যক্তিগত নামে মামলা হয়নি। পদের ওপর মামলা করা হয়েছে।