গ্লুকোমা রোগের আধুনিক চিকিৎসা
চোখ ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগকারী একটি স্নায়ু অপটিক নার্ভ। গ্লুকোমায় আক্রান্ত হলে এই স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কমে আসে দৃষ্টি। গ্লুকোমা সৃষ্টি করতে পারে ছানি বা টিউমারের মতো কারণও। হিউমার নামক একটি তরল চোখের আকৃতি বজায় রাখতে সাহায্য করে, চোখে পুষ্টি জোগায়। চোখের জলীয় রস নিয়মিতভাবে ট্র্যাবেকুলার মেশওয়ার্ক নামক একটি টিস্যুর মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। সিলিয়ারি বডি-সংলগ্ন কর্নিয়ার গা ঘেঁষে ট্র্যাবেকুলার মেশওয়ার্কের অবস্থান। ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায় এ নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে তরল জমা হয়ে চোখের ভেতরে বাড়তি চাপ তৈরি করে। এ উচ্চচাপ অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। তবে ইন্ট্রাঅকুলার চাপ বৃদ্ধি না পেয়েও অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যা স্বাভাবিক-টেনশন গ্লুকোমা নামে পরিচিত। গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বা ইন্ট্রাঅকুলার প্রেশার বেড়ে যাওয়া। পরিবারের অন্য সদস্যের এই রোগ থাকলে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিস্থূলতা, চোখে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি কারণেও হতে পারে। নিওভাসকুলার গ্লুকোমা তখনই ঘটে, যখন চোখ অতিরিক্ত রক্তনালি তৈরি করে, যা সাধারণত চোখের তরল নিষ্কাশনের অংশকে আবৃত করে। সাধারণত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো কারণে এটি ঘটে থাকে। এ অবস্থা হলেও চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারাতে হতে পারে। এমনকি চোখের আইরিস থেকে পিগমেন্ট ঝরে গিয়ে চোখ থেকে তরল বের হতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। যারা নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদেরও গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা বেশ কয়েকটি জিনের মিউটেশনের সঙ্গে যুক্ত। মোট ১৬টি মানব জিনোমিক অঞ্চল ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা এবং ৮টি ক্লোজড-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার সঙ্গে যুক্ত। এসব জিন মূলত গ্লুকোমার বিকাশ ও অগ্রগতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীর জিনগত ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশেও এসব জিন নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসা : এ রোগে তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছেÑ চোখের ড্রপ, লেজার ও শল্যচিকিৎসা। ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায় ‘ল্যাটানোপ্রোস্টেন বুনোডসমৃদ্ধ এক ধরনের চোখের ড্রপ বেশ কার্যকর। রয়েছে ল্যাটানোপোস্ট (প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন এনালগ পরিবার) ও অন্যান্য প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন। এগুলো মূলত চোখের ‘ট্র্যাবেকুলার মেশওয়ার্ক’ টিস্যুতে রো কাইনেজ এনজাইমকে বাধা দিয়ে তরল নিষ্কাশনের গতি বাড়ায়। এর বাইরেও রয়েছে আলফা-অ্যাড্রেন্যার্জিক অ্যাগোনিস্ট, বেটা-ব্লকার ও মাস্কারিনিক রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট (পিলকারপিন)। ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার রোগীকে আজীবন চিকিৎসায় থাকতে হয়। অন্যদিকে, ক্লোজড-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার ভালো দিক হলো, এর চিকিৎসা আছে। নিরাময়মূলক লেজার চিকিৎসা গ্লুকোমার অগ্রগতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গ্লুকোমার আধুনিক চিকিৎসা হলো এক্সপ্রেস শান্ট ইমপ্লান্টেশন, যাতে সফলতা অনেক বেশি ও জটিলতা অনেক কম। বাংলাদেশেও বিদেশের তুলনায় অনেক কম খরচে এমন গ্লুকোমার শল্যচিকিৎসা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য একটি চিকিৎসা হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত অপটিক নার্ভের পুনরুদ্ধার বা অপটিক নার্ভ-সংযোজন।
লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
চেম্বার : বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ শাখা, ঢাকা
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫; ০৯৬১৩৯৬৬৯৬৬