একটি সিনেমা পাল্টে দিলো গ্রাম, স্বীকৃতি পেলেন নির্মাতা
সিনেমার প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে- তার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেল নাচোলে। শুধু বিনোদন নয়, একটি সিনেমা বদলে দিয়েছে একটি অঞ্চলের পরিচিতি, মানুষের জীবনধারা এবং স্থানীয় ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ। সিনেমার নাম ‘নাচোলের রানী’।
১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া কৃষক-সাঁওতাল বিদ্রোহের সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রকার সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড।
২০০৬ সালে মুক্তির পর সিনেমাটি শুধু দর্শকের প্রশংসাই পায়নি বরং বিশ্বজুড়ে নাচোলের নাম ছড়িয়ে দিয়েছে। সিনেমার শুটিং স্পট ঘিরে গড়ে ওঠে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা, যা এখন জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়েও আসে পরিবর্তন।
নাচোলের বাসিন্দারা এই পরিবর্তনের মূলনায়ক- ডায়মন্ডকে ভুলে যাননি। তার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে সংগ্রহশালার পাশে একটি স্বীকৃতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামবাসীর উদ্যোগে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় গেল ১৬ নভেম্বর ফলকটি উন্মোচন করা হয়।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এ বিষয়ে ডায়মন্ড বলেন, ‘জীবদ্দশায় এমন একটি স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই দুর্লভ। অসংখ্য ধন্যবাদ যেসব সমিতি ও সংগঠন এর পেছনে আছেন, তাদের।’
‘নাচোলের রানী’তে ইলা মিত্রের চরিত্রে অভিনয় করেন শাহানা শুমি। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন কাজল মজুমদার, রবিউল ইসলাম, আফসানা রহমান, সাজ্জাদ, রিপন, তপনসহ আরও অনেকে। এতে প্রায় ৪৫০ জন সাঁওতাল এবং ২৫০ জন পুলিশ সদস্য অভিনয়ে অংশ নেন।
বলা দরকার, ১৯৫০ সালে যে সব স্থানে ইলা মিত্রের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে সেইসব জায়গা পরিণত হয়েছিল বিরানভূমিতে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর পরিচালক অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ২০০৪ সালে এসব নির্দিষ্ট স্পট খুঁজে বের করেন এবং সেখানেই সম্পন্ন করেন সিনেমার শুটিং।
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
এই সময়ে তিনি ৫৪ জনের একটি শুটিং ইউনিট নিয়ে তিন কক্ষবিশিষ্ট কেন্দুয়া পঞ্চনন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টানা ২৮ দিন অবস্থান করেন। বিদ্যুহীন, যোগাযোগবিহীন এই এলাকায় পরিবহনের জন্য ছিল শুধু একটি মহিষের গাড়ি। প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি শেষ করেন শুটিং।
২০০৬ সালে সিনেমাটি মুক্তির পর শুটিং স্পট দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে ওই অঞ্চলে রাস্তা, বিদ্যুৎসহ নানা উন্নয়ন শুরু হয়। শুটিংয়ের দুই দশক পর সেখানে নির্মিত হয়েছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা, যা এখন জনপ্রিয় পর্যটন স্পট।
আমাদের সময়/ এসএ
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’