মামলার আদ্যোপান্ত /
৩৯৭ দিনে রায়
চব্বিশের প্রবল গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলাটি হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার। মামলার রায় হয়েছে গতকাল সোমবার। সব মিলিয়ে সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এরপর চলতি বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়। একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর গত ১২ মে এ মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজনÑ শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। এরপর ১৭ জুন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও কামালকে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ২৪ জুন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক আমির হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
৩ আগস্ট মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই আন্দোলনে গুরুতর আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য দেন।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন। এর মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায় হলো; দেশের প্রথম কোনো সাবেক সরকারপ্রধান পেলেন সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।