রায়ের নিন্দা ১২শ শিক্ষক সাংবাদিক প্রকৌশলীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১২
শেয়ার :
রায়ের নিন্দা ১২শ শিক্ষক সাংবাদিক প্রকৌশলীর

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় প্রত্যাখ্যান করে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল শিক্ষক, প্রকৌশলী ও সাংবাদিকরা। গতকাল সোমবার ১ হাজার ১ জন প্রগতিশীল শিক্ষক, ১০১ জন প্রকৌশলী এবং ১০২ জন সাংবাদিক পৃথক বিবৃতিতে এই রায়কে মিথ্যা, প্রহসনমূলক ও সাজানো এবং বিচার প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতমূলক ও অসঙ্গতিতে ভরা বলে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ১ হাজার ১ জন শিক্ষকের পক্ষে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর মাহবুব আলম প্রদীপ। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছেন তা প্রহসনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বর্তমানে ক্যাঙ্গারু কোর্টের রূপ পরিগ্রহ করেছে এর স্বৈরাচারী, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থি কার্যকলাপ তথা মিথ্যা সাক্ষাৎ-প্রমাণের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এ দেশের কোটি জনতা আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ ধরনের বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্রমূলক এবং পূর্বনির্ধারিত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান, প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম, প্রফেসর ড. এম. জেড মামুন, অধ্যাপক ড. হারুনর রশীদ খান প্রমূখ।

দেশে-বিদেশে অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ১০১ প্রকৌশলীর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তা ধ্বংস করার জন্যই এই প্রহসনের বিচারের ব্যবস্থা। উন্নয়নের মাঠ পর্যায়ের কর্মী প্রকৌশলীরা এই অবস্থায় চুপ করে থাকার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৌশলী সমাজ মনে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের কার্যপরিধি সংশোধন করে যে অধ্যাদেশ জারি করেছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগত এখতিয়ারবহির্ভূত। তাই এই ধরনের আদালতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বা দলের কারও বিচার কাজ চলতেই পারে না। বিচারক ও প্রসিকিউটরের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত অভিযোগ রয়েছে। এতে নির্বাচনী বিচার বা সিলেক্টিভ জাস্টিসের আশঙ্কা রয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখযোগ্য প্রকৌশলীরা হলেন- প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর, শফিকুর রহমান অনু, নাজমুল আহসান, মো. হোসাইন, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, স্নেহাশিস ভৌমিক, আবুল হোসেন, নুরুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, মো. মুজিব, জাহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক পলাশ।

সিনিয়র সাংবাদিক তৈয়মুর ফারুক তুষার স্বাক্ষরিত দেশ-বিদেশে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ১০২ জন বাংলাদেশি সাংবাদিকের পক্ষে বিবৃতিতে বলা হয়- আমরা, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ১০২ জন সাংবাদিক, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আদালতে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া এবং আজকের (সোমবার) রায় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সম্প্রতি আইসিটি আদালত ঘিরে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য, বিচার কাজে অসঙ্গতি, অস্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হওয়ায় জনমনে বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন- সবই হুমকির মুখে পড়ে। এতে আরও বলা হয়, আদালতের ওপর অস্বাভাবিক চাপ, একতরফা তথ্য উপস্থাপন এবং অভিযুক্তদের আইনি সুরক্ষার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে না দেওয়া, প্রতিপক্ষের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আইনজীবীকে সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি পুরো জাতির কাছে ছিল হাস্যকর, মামলা চলাকালীন আসামি পক্ষের আইনজীবীদের ওপর মব সন্ত্রাসের অভিযোগও আমাদেরকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। বিবৃতিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুনর্বিচার, আদালতকে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপমুক্ত রাখা, সব পক্ষের নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে রায় প্রদানের দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকরা হলেন-সৈয়দ বদরুল আহসান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ডিইউজের সাবেক সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ আলী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, বাংলা ইনসাইডারের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির, ডিআরইউর সাবেক সহসভাপতি নজরুল কবীর, ডিআরইউর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল প্রমুখ।