রংপুরে সার সংকট ও কৃষি উপকরণের দাম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৯
শেয়ার :
রংপুরে সার সংকট ও কৃষি উপকরণের দাম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

বেশি দাম দিয়েও সার পাচ্ছেন না রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে মজুতদারি করছে এবং বেআইনিভাবে সার বিক্রি করছে। রবি মৌসুমের শুরুতে উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আলু, ভুট্টা ও শাকসবজি চাষে ব্যস্ত থাকলেও সারের সংকটে মাঠের কাজের গতি এখন কিছুটা মন্থর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি – এই তিন ধরনের নন-ইউরিয়া সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় জমি প্রস্তুত ও চাষাবাদে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।

এ ছাড়াও, কীটনাশক ও জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা কঠিন চাপে পড়েছেন। উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়িয়েও লাভ ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে, হিমাগারের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় অতিরিক্ত ফসল সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না, বাধ্য হয়ে মৌসুম চলাকালেই কম দামে ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কৃষক সুজন মিয়া জানান, ‘চরে ভুট্টা আবাদ শুরু করেছি, কিন্তু সার পাচ্ছি না। বেশি দাম দিলেও মেলে না, এখন আমরা একপ্রকার হতাশায় পড়েছি।‘ অন্যদিকে, উত্তরাধিকারসূত্রে কৃষিকাজে যুক্ত একই উপজেলার কৃষক জমির উদ্দিন জানান, ‘গত কয়েক বছর ধরে কৃষি যন্ত্রপাতি, সার ও কীটনাশকের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ফলে উৎপাদন খরচ এতটাই বেড়েছে যে, ফসল বিক্রি করে সেই ব্যয় তুলতে পারছেন না কৃষকরা।‘

তিনি আরও জানান, ‘ধান, আলু আর সবজিতে সবচেয়ে কম দাম পাচ্ছি আমরা। শীতকালে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়, কিন্তু গ্রামের বাজারে তার সঠিক দাম মেলে না। সরকারের নির্ধারিত কোনো মূল্যতালিকাও থাকে না। এ বছর বাজারে চালের দাম ছিল অনেক বেশি, কিন্তু ধান বিক্রির সময় আমরা সেই সুবিধা পাইনি। অধিকাংশ কৃষক ধান বিক্রি করেছেন ৯০০ থেকে ১,০০০ টাকায়, অথচ সরকার কিনেছে ১,৪৫০ টাকায় – আমরা সেই দামে বিক্রি করতে পারিনি।‘

রংপুর জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বরাদ্দ কম হওয়ায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি আশা করেছেন, দ্রুতই সংকট কেটে যাবে। তাছাড়া রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ডিলার যাতে অবৈধভাবে সার বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক উপজেলায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে ডিলারদের। কোথাও সারের কোনো সংকট নেই।‘ 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

আমাদের সময়/ টিটিএ