শীতে শরীর উষ্ণ রাখবে যেসব খাবার
হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। প্রতিদিন নামছে তাপমাত্রার পারদ। শীত পড়তেই অনেকের আতঙ্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। সারাক্ষণই প্রায় গরম জামাকাপড় পরে থাকছেন। সব সময় গরম পোশাক পরে থাকার ফলে পেটগরম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গরম পোশাক পরা ছাড়াও শীতের হাত থেকে বাঁচার আরও একটি অস্ত্র হল কিছু খাবার। যেগুলো খেলে ভিতর থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব।
মুলা : অনেকেরই অপছন্দের এই সবজি। শীতকালীন এই সবজির উপকারিতা কিন্তু কম নয়। ফাইবার-সমৃদ্ধ মুলা শীতের দিনে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। শীতের হাতে কাবু হতে না চাইলে রোজ না হলেও মুলার দিকে থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না।
বাদাম ও খেজুর : শীত শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা হলেও কমে যায়। এই সময় সুস্থ থাকতে যে খাবারগুলো বেশি পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম বাদাম ও খেজুর। প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে এগুলি। এ ছাড়াও শরীর চনমনে রাখতেও বাদাম ও খেজুর বেশ উপকারী।
গোল মরিচ : শীতকালে খাবারের সঙ্গে গোলমরিচ দিলে রোগ-বালাই দূরে রাখে। কালো গোল মরিচে আছে প্রদাহরোধী উপাদান যা নানা ধরনের শীতকালীন রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। যেমন শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা-সর্দি, কফ এবং জয়েন্ট পেইন।
আপেল : শীতকালে আপেলের উৎপাদন হয় বেশি। এই সুস্বাদু ফলটিতে আছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, নানা ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি। এসব উপাদান হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশপাশি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে।
ডার্ক চকোলেট : ডার্ক কোকোয়া পাউডার থেকে তৈরি এক গ্লাস গরম চকোলেট খেতে পারলে শীতকালে আপনার বিপাকীয় প্রক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এবং দেহের তাপমাত্রাও বাড়াবে। প্রতিদিন আপনি এক টুকরো খাঁটি ডার্ক চিনিহীন চকোলেটও খেতে পারেন।
টমেটো : একবাটি ধোঁয়া ওঠা টমেটো স্যুপ বা সুরুয়া খেলে শীতকালে আপনি দারুন উপকার পাবেন। টমেটোতে আছে ভিটামিন সি এবং লাইকোপেন উপাদান যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলবে এবং শীতকালীন রোগ-বালাই থেকে মুক্ত রাখবে।
সবুজ শাক-সবজি : বছরের যে কোনো সময়ই সবুজ শাক-সবজি খাওয়া ভালো। তবে শীতকালে দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতোকে শক্তিশালী করতে সবুজ শাক-সবজি বেশ কার্যকর।
গুড় : প্রচুর আয়রন, এনার্জির উৎস ছাড়াও গুড় কিন্তু হজমশক্তিও বৃদ্ধি করে। যাদের ডায়াবিটিস রয়েছে তারাও কিন্তু নির্ভয়ে গুড় খেতে পারেন। শীতে শরীরকে গরম রাখতে জুড়ি নেই গুড়ের।
মাংস : খাসি, গরু বা হাঁস, যেকোনো মাংস শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। শীতকালে প্রতিদিন যেকোনো বেলাতে রাখতে পারেন মাংসের পদ। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পরিমাণে বেশি খাওয়া হয়ে না যায়।
মধু : মধু শরীরের ভেতর তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে। মধুতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও আন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের ইমিউনিটি বজায় রাখে। ঠান্ডাজনিত অসুখ থেকে রক্ষা করে। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ঘি : যদিও অনেকেই মনে করেন ঘি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে তথাপি সীমিত পরিমাণে ঘি খেলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে ঘি দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কারণ ঘি-তে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।
কিসমিস : কিসমিস একটি স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন খাবার। কিসমিস ভেজানো পানি শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী। কিসমিসে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরে অতিরিক্ত শক্তির জোগান দেয়। শুধু স্বাদেই অতুলনীয় নয় ছোট এই ড্রাই ফ্রুট শীতে শরীরের ভেতর গরম রাখে।
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
ডিম : পুরুষের ক্ষেত্রে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে ডিম। এটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি খাবার। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৫, বি১২, বি৬, ডি, ই, কে, ফোলেট, ফসফরাস, সেলিনিয়াম, ক্যালিয়াম ও জিংক। প্রতিটি ডিমের মধ্যে রয়েছে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন।
তুলসী ও আদা : শীতের সকালে তুলসী পাতা আর আদা দেওয়া চায়ের স্বাদই আলাদা। এছাড়াও আদা ও তুলসী দেহে থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে, হজমশক্তি বাড়ায়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়, তাই শীতকালে তুলসী-আদা চা যেন বাদ না যায় প্রতিদিনের ডায়েট থেকে।
দারুচিনি : প্রতিদিন দারুচিনি খেলে দেহে মেটাবলিজম বাড়ে। গরম জল বা রান্নায় মশলা হিসাবে যে কোনো ভাবেই খাওয়া যেতে পারে দারুচিনি।
গরম স্যুপ : মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ যে কোনো গরম স্যুপ কিন্তু শীতের সন্ধ্যার স্ন্যাকস হতেই পারে। এমনকী ডিনারের জন্যেও খুবই ভালো। এতে চিকেন বা সয়াবিন যোগ করলেই একটা কমপ্লিট নিউট্রিশন ব্যাংক পেয়ে যাবেন।
আদা চা : শীতকালে নিজেকে গরম রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এক কাপ আদা চা। থার্মোজেনিক উপাদানের কারণে আদা শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। এটি হজমে সহায়তা করে এবং রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।
রসুন : শরীরের ভেতর গরম রাখার জন্য খাবারের তালিকায় অবশ্যই রাখুন রসুন। রান্নার সঙ্গে উপকরণ তো বটেই, খেতে পারেন গার্লিক ব্রেড বা রসুনের আচারও।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
মরিচ : শরীরে উষ্ণতা ধরে রাখতে শুকনো মরিচের জুড়ি নেই৷ শুকনা মরিচে আছে পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো উপকারী উপাদান, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী।
কমলা লেবু : ভিটামিন সি এবং এ রয়েছে এমন ধরনের ফল শীতকালে বেশি মাত্রায় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ এই দুটি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মাখন : সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর একটি মাখন। এতে আছে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি এবং চর্বি। শীতকালে সামান্য পরিমাণে মাখন খেলে দেহের তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
আমাদের সময়/ টিটিএ