এক ছাদের নিচে মিলবে সব

সাজ্জাদ মাহমুদ খান
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭
শেয়ার :
এক ছাদের নিচে মিলবে সব

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে মানুষের জীবনের ধাপগুলো অনেকটাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অপরাধের ধরনও। বিশেষ করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া আইডি, ম্যালওয়্যার, ফিশিং, ডিপফেকসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তার ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। ক্রমবর্ধমান এসব সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) চালু করেছে ‘সাইবার সাপোর্ট সেন্টার’। এতে অনলাইন প্রতারণা, সামাজিক মাধ্যমে হয়রানি, ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য ফাঁস, আর্থিক জালিয়াতিসহ সব ধরনের সাইবার সমস্যার সমাধান মিলবে এক ছাদের নিচে।

ডিএমপি জানায়, ফেসবুক, ইমো কিংবা মোবাইল হ্যাক এখন নিত্যদিনের ঘটনা। দিন দিন নিত্যনতুন সাইবার অপরাধ বাড়ছে। এআই দিয়ে তৈরি কিংবা ডিপফেক ভিডিও অনেক মানুষের জীবন তছনছ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা সাইবার বুলিংসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। তাই নারীরা যাতে অভিযোগ দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, এ জন্য নারীদের জন্য সাইবার সেন্টারে নারী অফিসাররা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ই-মেইল ও টেলিফোনের মাধ্যমেও সমস্যার সমাধান মিলবে। যারা প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না কিংবা বিভিন্ন কারণে থানায় যেতে দ্বিধায় থাকেন, তাদের জন্য এটি আরও সহজতর সমাধান হবে। আগামী ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর এই সাইবার সাপোর্ট সেন্টারটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১২টি ডেস্ক নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে এই সাপোর্ট সেন্টার। প্রতিটি ডেস্কে থাকবেন প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্য, যারা প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন এবং সাইবার অপরাধ দমন বিষয়ে বিশেষ দক্ষ। বিশেষ করে নারীদের হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল সংক্রান্ত অভিযোগে দায়িত্ব পালন করবেন নারী পুলিশ কর্মকর্তা, যাতে ভুক্তভোগীরা নিশ্চিন্তে তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবির প্রধান কার্যালয়ের বাইরের দিকে মূল সড়কের পাশে খোলামেলা পরিবেশে সাইবার সাপোর্ট সেন্টারটি স্থাপন করা হচ্ছে। এতে তাৎক্ষণিক সেবা মিলবে। অপরাধের ধরন বুঝে ভুক্তভোগীর মামলা নিতে সহায়তা, প্রমাণ সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে টিম। অনেকেই পুরুষদের কাছে সাইবার অপরাধের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই নারীদের জন্য নারী কর্মকর্তারা সেবা দেবেন।

থানায় অভিযোগ দেওয়া সাইবার ক্রাইমের ঘটনারও দ্রুত সমাধান হবে উল্লেখ করে নাসিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এনালগ পদ্ধতিতে থানায় দায়ের করা সাইবার অপরাধের অভিযোগ ডিবিতে আসে। সাইবার সেন্টার চালুর পর কয়েকটি ক্লিকেই অভিযোগ ডিবিতে জমা হবে। ডিবি কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীরা সমস্যার সমাধান পাবেন। সর্বাধুনিক ল্যাব ব্যবহার করে সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে আসামিকে আটক করতে পুলিশের টিম প্রস্তুত থাকবে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগীরা অনেক সময় ভয়াবহ অপরাধের শিকার হয়েও ভয় বা লজ্জা থেকে অভিযোগ জানাতে চান না। সেই বাধা দূর করতেই এ সেন্টারের পরিবেশ রাখা হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয় ও নিরাপদ। প্রত্যেক অভিযোগকারীকে সহায়তার জন্য আলাদা আলাদা কেবিনে একজন করে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। শুরুতে অফিস সময়ে এই সেন্টারের সহযোগিতা চালু থাকবে। পরে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে।

গতকাল রবিবার ঢাকার মিন্টো রোডে গিয়ে দেখা যায়, সাবেক রমনা থানার পশ্চিম পাশে ডিবি কার্যালয়ের সীমানা প্রচীরে তৈরি হচ্ছে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার। রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে কর্মযজ্ঞ। ভবন তৈরির কাজ শেষ। এখন চলছে শেষ মুর্হূতের প্রস্তুতি ও সামনের অংশের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। সড়কের পাশে হওয়ায় এখানে সেবা নিতে ডিবির ভেতরে প্রবেশের প্রয়োজন হবে না। এতে সেবা হবে দ্রুত এবং সহজতর।

ডিএমপি সূত্র জানায়, সাইবার সেন্টারের দায়িত্বে থাকবেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। তার অধীনে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সেন্টারটি। সাইবার অপরাধসংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করতে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। ডিএমপির বিভিন্ন থানায় সাইবারসংক্রান্ত মামলা বা জিডি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরাসরি ডিবিতে জমা হবে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীরা সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে সরাসরি লিখিত অভিযোগ দিতে পারবেন। পাশাপাশি মামলা, জিডি বা অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক আপডেট জানতে পারবেন।