নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশে রদবদল
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসনের জন্য নতুন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবার পুলিশেও আসছে নতুন মুখ। ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদে পরিবর্তন আসছে। গতকাল কয়েকটি পদে পরিবর্তন এসেছে। সামনে আরও পরিবর্তন আসছে। ধাপে ধাপে বিভিন্ন থানার ওসি পদেও পরিবর্তন আসবে।
ভোটের সময় মাঠে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে বিবেচনা করা হয়। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যালট বক্স সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। এসব বিবেচনায় নিরপেক্ষ প্রশাসনের অংশ হিসেবে পুলিশে রদবদল শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার হলেন শিল্পাঞ্চল পুলিশের ডিআইজি মো. ইসরাইল হাওলাদার। এর আগে সেখানে ছিলেন নাজমুল করিম খান। গত ২ সেপ্টেম্বর তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য ছিল। গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ২ মাস ১০ দিন পর মো. নাজমুল করিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় গত সপ্তাহে। রাস্তা বন্ধ করে গাজীপুরের যাতায়াতের কারণে সমালোচিত হন ওই কর্মকর্তা।
বর্তমানে বিসিএস ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটের আগে ২৫ ব্যাচের অনেককে প্রত্যাহার করে তাঁদের স্থলে ২৮ ব্যাচ থেকে নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এখন যারা মাঠ পর্যায়ে পদায়ন পাচ্ছেন, তাঁরা আগামী নির্বাচনের দায়িত্ব সামলাবেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
গতকাল বেশ কয়েকটি জেলায় নতুন পুলিশ সুপার পদায়ন করা হয়। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম হয়েছেন গাইবান্ধার এসপি। ফরিদপুরের এসপি হলেন দিনাজপুরের এসপি মারুফাত হুসাইন। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানকে করা হয়েছে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার। পাবনার এসপি হলেন হবিগঞ্জের পুলেশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান। আর নীলফামারির পুলিশ সুপার হয়েছেন ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি কাজী মো. ফজলুল করিম হয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক। পার্বত্য জেলার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডিআইজি মো. নজরুল ইসলামকে করা হয়েছে এপিবিএনের ডিআইজি।
এ ছাড়া পুলিশ টেলিমমের ডিআইজি রফিকুল হাসান গনিকে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি করা হয়েছে। আর হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি সালমা বেগম হয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যটালিয়ান পার্বত্য জেলা কার্যালয়ের ডিআইজি। গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নিশাত এ্যাঞ্জেলাকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি করা হয়েছে। ফরিদপুরের এসপি আব্দুল জলিলকে করা হয়েছে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার। পাবনার এসপি মোরতোজা আলী খানকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার করা হয়েছে। নীলফামারীর এসপি আবুল ফজল মহম্মদ তারিক হোসেন খানকে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৬৪ জেলার এসপিদের কর্মদক্ষতা যাচাই চলছে। এদের মধ্যে যাঁরা যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তাঁদের নির্বাচনের মাঠে রাখা হবে। যারা মূল্যায়নে বাদ পড়বেন, তাঁদের প্রত্যাহার করা হবে। নির্বাচনের অংশ হিসেবে পুলিশ সুপার (এসপি) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে নিয়োগপ্রত্যাশীদের বাছাইয়ের কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে এসপি-ওসির পদায়ন হবে লটারির মাধ্যমে। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠার পর তা বাস্তবায়ন ঝুলে গেছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেনÑ এমন পুলিশ কর্মকর্তাদের এবারের ভোটে দায়িত্বে রাখা হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঠ পর্যায়ে পুলিশের রদবদলের আগে প্রশাসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন ডিসিরা। তাই জেলা প্রশাসক পদে বেশ পরিবর্তন এসেছে। তবে পদায়নের আদেশের পর বিতর্কের জেরে প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচন মাথায় রেখে একই দিন নতুন করে চার বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারও নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ভোটের দিন পুলিশের যাঁরা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। পুলিশেও আরও পরিবর্তন আসছে। আপাতত জোর দেওয়া হয়েছে ডিআইজি পদে পদোন্নতিতেও। তফসিল ঘোষণার আগেই বিসিএস ২১ ব্যাচ পর্যন্ত বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে পদোন্নতির ক্ষেত্রে। নিরপেক্ষ মাঠ সাজাতে পুলিশের এসব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে প্রত্যাশীদের মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদন এখনও না পৌঁছায় পদোন্নতির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে।