যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে জাহাজ চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৮
শেয়ার :
যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে জাহাজ চলাচল

কিছু মধ্যস্বত্বভোগী পণ্যের এজেন্টের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নৌপথে পণ্য পরিবহন সেবা। তাদের দৌরাত্ম্যে এরই মধ্যে ৮০০ জাহাজ স্ক্র্যাপ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া ভাড়ার টাকা না পাওয়ায় মালিকদের পক্ষে এখন আর জাহাজ চালানো সম্ভব নয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জাহাজ মালিকদের ১০ দফা দাবি আদায় না হলে সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

গতকাল রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাহাজ মালিকরা। যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভিওএ) ও কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিভিওএ’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির। লিখিত বক্তৃতায় ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির বলেন, আমরা সরকারি পণ্য পরিবহন নীতিমালা অনুযায়ী সিরিয়ালে পণ্য পরিবহন করলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের কিছু পণ্যের এজেন্ট সিন্ডিকেট সিরিয়ালবিহীন পণ্য পরিবহন করছে। আমরা নীতিমালা অনুযায়ী সিরিয়ালে বসে থেকেও দুই-তিন মাসেও একটি ট্রিপ পণ্য পরিবহন করছি। অন্যদিকে সিরিয়ালবিহীন জাহাজগুলো অবৈধভাবে মাসে তিন-চার ট্রিপ পণ্য পরিবহন করছে। কিছু ফ্যাক্টরির মালিক নীতিমালা অমান্য করে চার্টার জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহন করছে।

এ ছাড়া কিছু পণ্যের এজেন্ট জাহাজ মালিরকরা ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত ২১১ কোটি টাকা পরিশোধ করছেন না। পাশাপাশি তাঁরা জাহাজ মালিকদের পরিবহন ভাড়া বাবদ পরিশোধ করছেন না পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকাও। এ ছাড়া ডেমারেজের টাকাও তারা পরিশোধ করছে না। এ ক্ষেত্রে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরও নানা টালবাহানা করছে। এ ছাড়া কতিপয় পণ্যের এজেন্টরা আমাদের জাহাজগুলোকে ভাসমান গোডাউন বানিয়ে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অবৈধ মুনাফা অর্জন করছে। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী ছোট জাহাজ সর্বোচ্চ আট দিনে এবং বড় জাহাজ ১১ দিনে খালি করার কথা থাকলেও ১০-১১ মাস ভাসমান গোডাউন করে রেখেছে।

মেহবুব কবির আরও বলেন, টাকার অভাবে এরই মধ্যে অন্তত ৮০০ জাহাজ স্ক্র্যাপ হয়ে গেছে। বকেয়া টাকা না পেলে যে কোনো সময় নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া জাহাজ বন্ধ হলে প্রতিযোগিতামূলক পণ্য পরিবহনের পরিবর্তে সিন্ডিকেটরা একচেটিয়া ভাড়া বৃদ্ধি করবে। এতে ভোক্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলোÑ পণ্য পরিবহন নীতিমালা-২০২৪ বাস্তবায়ন করতে হবে; নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে; বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের পণ্যের এজেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে; বিডব্লিউটিসিসি পরিচালনা পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠর ভিত্তিতে হতে হবে; বকেয়া ডেমারেজের ২১১ কোটি টাকাসহ চলমান সমস্ত ভাড়া পরিশোধ করতে হবে; পণ্য পরিবহন করে জাহাজ ভাসমান গোডাউন করা বন্ধ করতে হবে; সমস্ত জাহাজ নৌ নীতিমালা অনুযায়ী সিরিয়ালভুক্ত হয়ে চলতে হবে; ফ্যাক্টরি মালিকদের নীতিমালা বহির্ভূত চার্টার জাহাজে পণ্য পরিবহন বন্ধ করতে হবে; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের সদস্য ব্যতিত কমার্শিয়াল পণ্য পরিবহন বন্ধ করতে হবে এবং সমুদ্র বন্দর থেকে বাল্কহেডে পণ্য পরিবহন বন্ধ করতে হবে।

মেহবুবা কবীর বলেন, এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। অন্যথায় ১৫ দিন পর জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।