রবীন্দ্র সরোবরে নবান্নের উল্লাস /

মুক্তমঞ্চে ঋতুর অন্নের গান

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২:০৭
শেয়ার :
মুক্তমঞ্চে ঋতুর অন্নের গান

কনক্রিটের যান্ত্রিক নগরজীবনে ধানের শিষের সুবাস, হেমন্তের মাটির টান ও লোকজ ঐতিহ্যের স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো ‘নবান্ন উৎসব ১৪৩২’। 

রোববার (১৬ নভেম্বর) ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে আয়োজনটি করে ষড়ঋতু উদযাপন জাতীয় পর্ষদ। বাংলার কৃষিজীবন, নতুন ধানের গন্ধ, মাটি ও মানুষের অন্তর্গত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে উৎসবে ছিল গান, কবিতা, নৃত্য ও লোকসংগীতের সমন্বিত পরিবেশনা।

বিকাল ৪টায় সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। পরে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লেখক, শিল্পী ও সুধীজনরা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের আহ্বায়ক, দৈনিক আমাদের সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব দীপান্ত রায়হান।

বক্তারা বলেন, নবান্ন শুধু মৌসুমি উৎসব নয়, এটি পরিশ্রমী মানুষের জীবনচেতনা ও বাংলার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। 

সভাপতির বক্তব্যে এহসান মাহমুদ বলেন, ‘রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, সেটি আরও দৃঢ়ভাবে বিনির্মাণ করতে হবে। সবার আগে বাংলাদেশ-পাহাড় হোক বা সমতল, এই চেতনায় আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমানসহ সকল মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে যাব। আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বে তুলে ধরতে চাই; নবান্ন, শরৎ উৎসবের ধারাবাহিকতায় সামনে ঋতু উৎসব হবে। বাংলাদেশ আজ ক্রান্তিকালে, তাই নাগরিক হিসেবে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। সবার মঙ্গল হোক, সবার আগে বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দ নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের শক্তিশালী বাহক। আমরা চাই, এই উৎসব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবহমান থাকুক।’

দীপান্ত রায়হান বলেন, ‘এই আয়োজনের লক্ষ্য বাংলার কৃষি-ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং নাগরিক জীবনে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা।’

উদ্বোধনী পর্বের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন- ফারহানা করিম তন্ত্রা, মনুসংহিতা, দেবশর্মা ও মুক্তা ঠাকুর। এক পর্যায়ে মঞ্চে আসেন নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা; ঠান্ডা জনিত কারণে গান না গাইলেও তিনি বলেন, ‘আজকের এই নবান্ন উৎসবের লোভ সামলাতে পারলাম না। তবুও মঞ্চে এলাম। সামনের উৎসবে অবশ্যই গান গাইবো, ইনশাআল্লাহ।’


এরপর লোকসংগীত পরিবেশন করেন সাগর বাউল। তিনি গেয়ে শোনান ভবা পাগলার “বারে বারে আর আসা হবে না”, লালনের “লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে” এবং শাহ আব্দুল করিমের “আমার মাটির পিঞ্জিরায় সোনার ময়না রে…”।

পরে কবিতা আবৃত্তি করেন ইসমত শিল্পী, কবি ও প্রকাশক সাঈদ বারী, শামস আরিফিন, সানাউল্লাহ সাগর, রকিব লিখন, রিক্তা রিচি, নোমান রহমান, রাসেল রায়হান, মাসুম আওয়াল, মাহবুবা ফারুক, পলিয়ার ওয়াহিদ, জব্বার আল নাঈম প্রমুখ।

মঞ্চে পরবর্তী লোকসংগীত পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী কোহিনুর আক্তার গোলাপী-তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় “তিন পাগলে হলো মেলা” ও “রসিক আমার মন বান্ধিয়া…”। এরপর গান পরিবেশন করেন ডলি মন্ডল- “লালন কী জাত সংসারে”, “ভবে কেউ কারো নয় দুঃখের দুঃখী”, “বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে”।

উৎসবের সবশেষে মঞ্চে আসেন লোকসংগীত শিল্পী বাউলমাতা আলেয়া বেগম। তার কন্ঠের পরিবেশনায় ছিল “দেখা না দিলে বন্ধু কথা কইও না’, “মালা কার লাগিয়া গাথিরে মালা... কার লাগিয়া গাথি...”, “কি থেকে যে কি হলো” গানগুলো। তার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব ১৪৩২-এর পর্দা নামে।


আমাদের সময়/এআই