ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন ভিডিও ভাইরাল /
সেই প্রধান শিক্ষক সাময়িক বহিষ্কার
ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন ভিডিও ভাইরালের ঘটনায়মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দাবি, ওই প্রধান শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে, না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সকালে ওই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মানববন্ধন করে ওই প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেন।
শিক্ষার্থী স্থানীয়রা বলেন, ‘একজন প্রধান শিক্ষকের চরিত্র যদি এমন হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষাটা পাবে কোথায়। আর এই ভিডিও যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখন তো ওই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থীরা দেখছে। আর ওই শিক্ষকের লজ্জা-শরম যদি থাকে তাহলে কখনোই ওই স্কুলে প্রবেশ করবে না। তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, আমরা আরও কঠিন আন্দোলনে যাব। এমন অসভ্য নোংরা মানুষ কখনোই শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তাই তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই। প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের ছেলে এই প্রতিষ্ঠানে দশম শ্রেণী পড়ে। আর সেই প্রধান শিক্ষকই তার ছেলের বান্ধবীর সঙ্গে এ জঘন্য কাজ করেছে।’
স্থানীয় মনিরুজ্জামান সেন্টু বলেন, ‘এই শিক্ষক যদি বিদ্যালয়ে থাকে তাহলে নতুন কোনো ছাত্র-ছাত্রী আর এখানে ভর্তি হবে না। তাই আমরা সাময়িক বহিষ্কার নয়, স্থায়ী বহিষ্কার চাই। তাছাড়া এই শিক্ষক চাকরি করার কোনো যোগ্যতা রাখে না। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমরা এই শিক্ষককে আর এখানে দেখতে চাই না।’
সাবেক শিক্ষার্থীর মাসুম পারভেজ বলেন, ‘আমি গতবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এখন আমার বোন পড়ে এ প্রতিষ্ঠানে। প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের সঙ্গে দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের যে অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য। আমরা তার স্থায়ী পদত্যাগ চাই, না করলে তাকে বাধ্য করা হবে।’
স্থানীয় জুয়েল রানা বলেন, ‘এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ে। আমাদের কত স্বপ্ন ছেলেমেয়েরা অনেক ভালোভাবে লেখাপড়া শিখবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এমন একটা কাজ করেছে, ছেলেমেয়েদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।’
নবম শ্রেণী শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খাতুন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক এর আগে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এরকম অনৈতিক ঘটনা ঘটিয়েছিল। আমরা প্রমাণের অভাবে তাকে কিছু করতে পারিনি। এবার সে দশম শ্রেণীর ছাত্রীর সঙ্গে যে অনৈতিক কাজ করেছে এটা অত্যন্ত জঘন্য। আমরা এবার প্রমাণ পেয়েছি। তাই এই শিক্ষকের সম্পূর্ণ পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা হেডমাস্টারের বিচারের পাশাপাশি দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীরও বিচার চাই। কারণ ওই ছাত্রীও দোষী।’
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জামশেদ আলী বলেন, ‘ওই শিক্ষক ছাত্রীর সঙ্গে যে অনৈতিক কাজ করেছে, আমরা চাই এটার বিচার হোক। আমাদের অনেক কষ্টে গড়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একজন শিক্ষকের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে, এটা কখনোই আমরা হতে দেব না।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মকলেছুর রহমান বলেন, ‘যে অনৈতিক ঘটনা ঘটে গেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বসে তাকে (প্রধান শিক্ষক) সাময়িক বরখাস্ত করেছি। আর স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সরকারি বিধি মোতাবেক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এ ছাড়া এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাব ও স্থানীয়রা খুব ক্ষুব্ধ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের ভিডিও আমরা দেখেছি। তবে এ ব্যাপারে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং লিখিত অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা বিষয়টি জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ ও দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর একটি অশালীন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে পুরো গাংনীতে তোলপাড় শুরু হয়।
আমাদের সময়/আরডি