হার্ট ব্লকের প্রকারভেদ ও চিকিৎসা
হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখার জন্য অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকলে বৈদ্যুতিক সংকেত সঠিকভাবে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। যখন এই সংকেত চলাচলে বিলম্ব, ব্যাঘাত বা সম্পূর্ণ বাধা সৃষ্টি হয়, তখন সেই অবস্থাকে বলা হয়ে থাকে হার্ট ব্লক। এটি কখনও সাধারণ ও উপসর্গহীন হতে পারে, আবার কখনও জীবনহানিকর পর্যায়েও পৌঁছাতে পারে। তাই হার্ট ব্লকের ধরন, কারণ ও তীব্রতা অনুযায়ী সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট ব্লক সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত। ফার্স্ট-ডিগ্রি হার্ট ব্লকে বৈদ্যুতিক সংকেত AV নোড পার হওয়ার সময় কিছুটা ধীর হয়ে যায়। ফলে সামান্য বিলম্ব তৈরি হলেও সংকেত শেষ পর্যন্ত ভেন্ট্রিকলে পৌঁছে। এটি তুলনামূলকভাবে মৃদু ও কম ঝুঁকিপূর্ণ। সেকেন্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লক দুই ধরনের। এর একটি হলো- টাইপ ও (ওয়েনকেবাখ)। এখানে সংকেত ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে একটি হার্টবিট বাদ পড়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা হালকাভাবে দেখা দেয়। অপরদিকে টাইপ II (Mobitz Type II)-তে আকস্মিকভাবে কিছু সংকেত ভেন্ট্রিকলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ফলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এর অগ্রসর রূপ অনেক সময় স্থায়ী পেসমেকার ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
থার্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লক সবচেয়ে গুরুতর। এ অবস্থায় অ্যাট্রিয়া থেকে ভেন্ট্রিকলে সংকেত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ভেন্ট্রিকল তখন স্বাধীনভাবে খুব ধীরগতির সংকেত তৈরি করে, যা কার্যকর রক্তসঞ্চালনের জন্য যথেষ্ট নয় এবং জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
হার্ট ব্লক নির্ণয়ে ইসিজি (ECG) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ব্লকের ধরন স্পষ্ট করে দেখায়। পাশাপাশি ইকোকার্ডিওগ্রাম হৃদযন্ত্রের গঠন ও রক্ত প্রবাহ মূল্যায়নে সহায়তা করে। কিছু ক্ষেত্রে স্ট্রেস টেস্ট, করোনারি এনজিওগ্রাফি, হোল্টার মনিটরিং ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে যখন ব্লক মাঝে মাঝে প্রকাশ পায় বা হৃদযন্ত্রের অন্য কোনো সমস্যা সন্দেহ হয়। রোগীর উপসর্গ, পূর্ববর্তী ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষাও সঠিক নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
চিকিৎসা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্লকের ধরন ও রোগীর সার্বিক অবস্থার ওপর। মৃদু হার্ট ব্লকে কখনও ওষুধ দিয়ে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, বিশেষত যখন উচ্চ রক্তচাপ, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ বা ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার মতো কারণ জড়িত থাকে। গুরুতর সেকেন্ড-ডিগ্রি (টাইপ II) ও থার্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লকে স্থায়ী পেসমেকারই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত চিকিৎসা। পেসমেকার হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখে এবং জীবনরক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান পরিহার এবং নিয়মিত ফলো-আপ হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
হার্ট ব্লক একটি কার্ডিয়াক কন্ডাকশন সমস্যা, যা সাধারণত স্বয়ংক্রিয়ভাবে সারে না এবং গুরুতর ক্ষেত্রে পেসমেকারই মূল চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত। তাই রোগীর উচিত একজন দক্ষ কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ ছাড়া কোনো বিকল্প বা অনিশ্চিত ওষুধ সেবন না করা।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট ও রিসার্চার
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
চেম্বার : ৪৭–৪৮ হাকিম টাওয়ার, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা হটলাইন : ০১৭৯৯৪৫৬৩৯৮