নতুন পোশাকে পুলিশ
মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে -সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা
দায়িত্ব পালনে নতুন রঙের ইউনিফর্মে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। গতকাল শনিবার থেকে মহানগর পুলিশসহ কয়েকটি বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যরা নতুন ইউনিফর্মে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে জেলা পুলিশ সদস্যরাও নতুন ইউনিফর্মে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন বলেন, এরই মধ্যে সব মহানগর পুলিশ, নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, হাইওয়ে পুলিশ নতুন ইউনিফর্মে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। জেলা ও রেঞ্জ পুলিশ পর্যায়ক্রমে নতুন এই পোশাক পরবেন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) আগের ইউনিফর্ম বহাল থাকবে।
গত বছর ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠার পর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার ও ইউনিফর্ম পরিবর্তনের দাবি ওঠে। পরে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পোশাক বাছাই করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির বাছাই করা রঙের ইউনিফর্ম সরকার অনুমোদন করে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল থেকে সব মহানগর পুলিশ লৌহ রঙের নতুন ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. সরওয়ার গতকাল বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যরা নতুন ইউনিফর্মে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০ হাজার সদস্যকে এই ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। বাকি সদস্যদেরও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ইউনিফর্ম দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি বৃহত্তর সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিফর্মের রঙ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো পুলিশ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও জবাবদিহিতার প্রতীক হিসেবে একটি নতুন পরিচয় দেওয়া।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) পোশাকের সঙ্গে সােঙ্গ সবারই মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন- পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। পুলিশের জন্য, র্যাবের জন্য এবং আনসারের জন্য। তিনটা সিলেক্ট করা হয়েছে। এটা ইমপ্লিমেন্ট হবে আস্তে আস্তে। একসঙ্গে সব করা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুলিশ সদস্যের নিজেদের কার্যকলাপ যদি পরিবর্তন না করা যায়, তবে পোশাক পরিবর্তন করে খুব বেশি কাজে আসবে না। শুধু সরকারের অর্থ ব্যয় হবে। কারণ, আগেও অনেকবার পোশাক পরিবর্তন হয়েছে পুলিশের। কিন্তু পুলিশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত বছর ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে এই পুলিশই গুলি চালায়। যে কারণে পোশাক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের মনোভাবেরও পরিবর্তন জরুরি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা বলেন, শুধু পোশাকের রঙ বদলালে হবে না। পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তবে জুলাই আন্দোলনে পুলিশকে যেভাবে মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল, তাতে ইউনিফর্ম পরিবর্তনটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এতে অন্তত জুলাই আন্দোলন কেন্দ্র করে মানুষের সঙ্গে পুলিশের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে আমি মনে করি। কারণ, আগের পোশাক দেখলেই মানুষের মনে পড়ে যায় এই পোশাকেই তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। যে কারণে আমি পোশাক পরিবর্তনের পক্ষে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পর বিডিআরের নাম ও ইউনিফর্ম বদল করা হয়েছিল।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, পোশাকের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের মানসিকতারও পরিবর্তন হবে বলে তারা আশা করেন।
এদিকে পুলিশের নতুন ইউনিফর্ম নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে জোর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অধিকাংশই নতুন রঙের পোশাক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, বিভিন্ন বাসাবাড়ি, অফিস, কারখানাসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডদেরও এই রঙের পোশাক রয়েছে। তারা আবার রাস্তাঘাটে পুলিশ পরিচয়ে অপরাধ করবে কি না- সেই প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ।